অটিজম কাকে বলে?
অটিজম কি? | অটিজম কাকে বলে?
শিশুরা বরাবরই খুব সেন্সেটিভ হয়ে থাকে। প্রতিনিয়ত এদের দরকার হয় সঠিক যত্নের। শিশুরা সঠিক যত্নের মাধ্যমেই বেড়ে উঠে। শিশুর যত্নটা প্রভাব ফেলে শিশুর বেড়ে ওঠা, মানুষিক বিকাশ, বুদ্ধিসম্পন্ন হয়ে উঠা প্রতিটি স্টেপেই। শিশুর যত্ন এতটাই গুরুত্বপূর্ণ। আর এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাটা পালন করে সবচেয়ে বেশি মা এবং বাবা। পাশাপাশি অন্যান্য সদস্যরা তো আছেনই।
বলা হয়ে থাকে, ন’বছর পর্যন্ত একটি শিশুর মানুষিক বিকাশ ঘটার সঠিক সময়। আর তাই এই সময় পর্যন্ত মা, বাবা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের যত্নের পাশাপাশি তাদের প্রতি এক্সট্রা কেয়ার এবং খেয়াল রাখা জরুরী। শিশু কিভাবে খাচ্ছে, কিভাবে রেসপন্স করছে, তার আচার-আচরণ সকল কিছুই খেয়াল রাখা জরুরী।
কেননা, এই সময় গুলোই একটি শিশুর জন্য সেন্সেটিভ সময়। এই সময়টাতেই শিশুর মধ্যে থাকা সমস্যা অথবা রোগ গুলো (যদি থাকে) আবিষ্কার করা যায়। যদি ওমন কোনো সমস্যা অথবা রোগ থেকে থাকে তাহলে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে তা সমাধানও করা যায় এবং শিশুকে সুস্থ করে তোলা যায়।
শিশুদের অনেক গুলো সমস্যা অথবা রোগের মধ্যে একটি হচ্ছে অটিজম। যদিও বর্তমানে এই সমস্যা অথবা রোগটি নিয়ে অনেকেই অনেক আলোচনা করেছে। এবং বেশিরভাগ মা বাবাই এই অটিজম সম্পর্কে জানতো না কিংবা ধারণা ছিল না। তারা জানতোই না, অটিজম কাকে বলে কিংবা অটিজম ব্যাপারটা আসলে কি।
বর্তমানে অটিজম নিয়ে বেশ আলোচনা হওয়ার ফলে অনেকেই এখন অটিজম সম্পর্কে জ্ঞাত। তবে জানার বা বুঝার পরিমাণ টা যে বেশি তা কিন্তু নয়। অনেক বাবা মা-ই আছেন যারা অটিজম কাকে বলে জানা তো দূরের ব্যাপার অটিজম শব্দটাই তারা শোনেননি। এই আর্টিকেলে আজকের আলোচনা অটিজম নিয়ে। অটিজম কাকে বলে কিংবা অটিজম টা মূলত কি সেগুলো নিয়েই বিস্তারিত আজকের আলোচনায়।
অটিজম কি?
“অটিজম” যার ইংরেজি শব্দ হচ্ছে “Autism.” অটিজম শব্দটি এসেছে মূলত আউটোস শব্দ থেকে। আউটোস শব্দটি একটি গ্রিক শব্দ। যার অর্থ আত্ম বা নিজ। অটিজম হচ্ছে শিশুদের স্মায়ুবিক একটি সমস্যা। যাকে বলা হয়, ডিসঅর্ডার অব নিউরাল ডেভেলপমেন্ট।
অটিজম কাকে বলে?
অটিজম হচ্ছে শিশুদের একটি মানুষিক সমস্যা বা রোগ। এটি সাধারণত শিশুদের স্নায়ুবিক সমস্যা জনিত রোগ। এই রোগের ফলে এই ধরণের শিশুরা অন্যান্য স্বাভাবিক শিশুদের তুলনায় ভিন্ন হয়।
এরা সহজে কারো সাথে মিশতে পারে না, স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে পারে না, এদের আচরণও অন্যান্য সুস্থ শিশুদের তুলনায় ভিন্ন হয়ে থাকে।
অর্থাৎ, যে সমস্যা মূলত একটি শিশুর শারীরিক এবং মানুষিক বিকাশে বাঁধাগ্রস্থ করে এবং অপূর্ণতায় রাখে তাকেই অটিজম বলে।
অটিজম রোগটি সাধারণত শিশুর ১ থেকে ৫ বছর বয়সের মধ্যে বেশি দেখা দেয়। এবং এই রোগটি বেশির ভাগই দেখা দেয়া ছেলেদের মধ্যে। মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের মধ্যেই এই রোগটি বেশি দেখা যায়।
অটিজম কেনো হয়?
ধারণা করা হয়, অটিজম সাধারণত ব্রেনের অস্বাভাবিক বায়োলজি ও কেমিস্ট্রির কারণে সৃষ্ট একটি সমস্যা কিংবা রোগ। অনেক বিজ্ঞানীদের মতে, অটিজম জিনগত কারণেও হয়ে থাকে বলে বলা হয়। তবে এটি ঠিক কি কারণে হয় বা হচ্ছে সেটি এখন অব্দি স্পষ্ট করে জানা যায়নি।
অনেকে আবার ধারণা করেন, শিশু গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন মায়ের দুশ্চিন্তা, ফ্রাস্ট্রেশন, অপুষ্টিতে ভোগা, টিকার প্রতিক্রিয়া, OCD তে ভোগা ইত্যাদি কারণে অটিজম হয়।
অটিজম এর প্রকারভেদ
অটিজম বেশ কয়েক প্রকার এর হয়ে থাকে। তবে বেশির ভাগ সময় যে দুটি অটিজম সমস্যা বা রোগ গুলো দেখা যায় তা হলোঃ ক্লাসিক অটিস্টিক ডিজঅর্ডার এবং অ্যাসপার্জার্স সিনড্রোম।
ক্লাসিক অটিস্টিক ডিজঅর্ডার সাধারণত শিশুর ৩ বছর হওয়ার আগেই এটি দেখা দেয়। এটি মূলত শিশুর বিকাশে বাঁধা দেয় কিংবা বলা যায়, শিশুর বিকাশে অনেক গুলো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। যেমনঃ শিশু দেরিতে কথা বলা, বুঝতে সমস্যা ইত্যাদি। ক্লাসিক অটিস্টিক ডিজঅর্ডার কে আবার আর্লি ইনফ্যান্টাইল অটিজমও বলা হয়ে থাকে।
অ্যাসপার্জার্স সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশু কথা বলতে পারলেও এরা কারো সাথে মিশতে পছন্দ করে না কিংবা মিশতে পারে না। এ রোগে আক্রান্ত শিশুরা যেকোনো একটি কাজে খুব বেশি পারদর্শী হয়ে থাকে। কিন্তু অন্য কোনো কাজে বা বিষয়ে আবার একেবারেই অপারগ এবং কিছুই বুঝে উঠতে পারে না।
বিশ্ব অটিজম দিবস কবে?
সুইস মনোবিজ্ঞানী অয়গেন ব্লয়লার ১৯১১ সালে সর্বপ্রথম অটিজম কে এক প্রকার মানুষিক রোগ বলে চিহ্নিত করেন। এরপর থেকেই মূলত অটিজম নিয়ে আরো বেশি গবেষণা করা শুরু হয়।
অটিজম সম্পর্কে মানুষকে আরো বেশি জ্ঞাত করার লক্ষ্যে এবং অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের মূল্যায়নের লক্ষ্যে ২০০৮ সালের ২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজম দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং প্রতি বছর ২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজম দিবস পালন করা হয়।
আরো দেখুন:
সর্বশেষে যদি বলি, অটিজম কাকে বলে কিংবা অটিজম রোগ টি মূলত কি এটি জানা যেমন জরূরি তেমনি জরূরি অটিজমে আক্রান্ত শিশুর এক্সট্রা কেয়ার নেয়া। যদিও এ ধরণের শিশুরা সামাজিক ভাবে অন্যদের সাথে মিশতে পারে না বা চলাফেরা করতে পারে না তবুও এদের জীবন কে সহজ করে তোলার জন্য প্রয়োজন এক্সট্রা এটেনশন এবং কেয়ার। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় থ্যারাপি। তবেই ধীরে ধীরে এরা স্বাভাবিক হয়ে উঠার পরিমাণ টা বাড়বে বলে আশা করা হয়।