ই কমার্স ব্যবসা কি?
আমাদের আধুনিক পৃথিবীতে ই-কমার্স এমন একটি সেক্টর যা করোনাকালীন সময় তাড়াতাড়ি নিজের জায়গাকে শক্ত করে নিয়েছে। ই-কমার্স বানাচ্ছে অনেক বেকার যুবকে-যুবতীকে উদ্যোক্তা এবং তৈরি করছে অনেকের কর্মসংস্থান। ই-কমার্স সম্পর্কে জানার এবং বুঝার আগ্রহ আমাদের সকলের মাঝেই আছে কারণ আমরা সকলেই কিছু না কিছু করতে চাই। তাহলে চলুন আমরা জেনে নেই ই কমার্স ব্যবসা কি এবং ই কমার্স ব্যবসা শুরুর গাইডলাইন সম্পর্কে।
ই কমার্স ব্যবসা কি?
ই-কমার্স এর পরিপূর্ণ রূপ হচ্ছে ইলেকট্রনিক কমার্স। ই-কমার্স পরিপূর্ণ পরিচালিত হয় কম্পিউটার ভিত্তিক নেটওয়ার্ক অর্থাৎ ইন্টারনেট দিয়ে। আধুনিক উপায়ে মানুষের পছন্দ-অপছন্দ এর ডাটা কালেক্ট করে ই-কমার্স কোম্পানিগুলো তাদের সেবা থেকে শুরু করে ক্রয় বিক্রয় সকল ধরনের কাজ সম্পন্ন করে থাকে। ভার্চুয়াল মার্কেটপ্লেসকেই আমরা ই-কমার্স বলতে পারি।
গুরুত্বপূর্ণ: ৪৪ তম বিসিএস সম্পূর্ণ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখুন।
ই-কমার্স বলতে কি বুঝায়?
ই কমার্স ব্যবসা কি এই বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের হালকা ধারণা হয়ে গেছে এখন আসুন জানি এর বিস্তারিত। ধরুন আপনি মার্কেটে গিয়ে একটি পণ্য ক্রয় করছেন বা মার্কেটে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছেন। এখন আপনার মার্কেটে গিয়ে পণ্য ক্রয়ের প্রয়োজন হয়না আপনি ঘরে বসেই আপনার নির্দিষ্ট পণ্যটি ক্রয় করতে পারবেন আর আপনি আপনার সকল পণ্য ঘরে বসেই বিক্রয় করতে পারবেন। বেচাকেনার এই সহজ মাধ্যম কি ই-কমার্স বলা হয়ে থাকে । ব্যবসায়িক ভাষায় বলতে গেলে ফিজিক্যাল প্রোডাক্ট গুলো ভার্চুয়াল মার্কেটপ্লেসে বিক্রি করা এবং কমাশিয়াল ট্রানজেকশন গুলো কেও ই কমার্স এর আওতায় ধরা হয়।
ই কমার্স ব্যবসা শুরুর গাইডলাইন?
আপনি যদি খুবিই দায়িত্বশীল এবং প্রয়োগিক জ্ঞান সম্পন্ন একটি মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে আপনার ই-কমার্স ব্যবসায় সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি থাকে। নিজেকে সময় দিন জানার চেষ্টা করুন।
- কোন প্রোডাক্ট নিয়ে আপনি কাজ করবেন?
- আপনার ডেলিভারি ম্যানকে হবে?
- আপনার ডেলিভারি প্রসেসিং কিভাবে হবে?
- আপনার পণ্যের মান কতটুকু কোয়ালিটিফুল হবে ?
আপনি যদি একটি সঠিক ই-কমার্স বিজনেস প্ল্যান করতে চান তাহলে এই বিষয়গুল আগে আপনাকে গুছিয়ে নিতে হবে। ই-কমার্স ব্যবসা কি তা অনেক মানুষই জানে কিন্তু কিভাবে সঠিক গাইডলাইন ইউজ করে কিভাবে ব্যবসা গুছিয়ে নিতে হবে তা আপনাকে বিস্তারিতভাবে কেউই বলবে না। কিন্তু আমি আপনার সাথে আজ কিছু গাইডলাইন শেয়ার করব।
১: বাজেট নির্ধারণ:
যে কোন ব্যবসার ক্ষেত্রে বাজেট নির্ধারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ডিসিশন যা ব্যবসা শুরু করার আগেই আপনাকে নির্ধারণ করে নিতে হবে। আপনি কতটুকু ব্যয় করতে পারবেন আর সেই ব্যয় থেকে কতটুকু আয় করা সম্ভব সেই হিসাব নিকাশ টা আগেই সেরে নেওয়া ভালো। ই কমার্স ব্যবসা শুরু করার আপনি গান করে রাখবেন আপনি ৬০ শতাংশ টাকা ব্যবসার সকল কাজে লাগাবেন আর বাকি 40% টাকা সাপোর্ট সিস্টেম হিসেবে রেখে দিবেন। যাতে কোনো বিপদ হলে আপনি এই 40% টাকা দিয়ে পুনরায় ব্যবসায় কামবেক করতে পারেন।
২: প্রোডাক্ট সম্পর্কে সঠিক ধারণা:
আপনি যদি ই-কমার্স ব্যবসা ব্যবসা করতে চান তাহলে আপনাকে আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকতে হবে। কোথায় থেকে কিনলে আপনার খরচ কম হবে এবং গুণগত মানসম্পন্ন প্রোডাক্ট আপনি আপনার ভোক্তাদের দিতে পারবেন সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
৩: প্রতিষ্ঠান নাম নির্ধারণ:
বিশ্বাস করুন না করুন ই-কমার্স ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নামটি যদি সুন্দর বা আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে ভোক্তাকে হিন্ট না দিতে পারে তাহলে ই-কমার্স ব্যবসায় এর খারাপ ইম্প্যাক্ট পরতে পারে।
৪: আইনি বিষয় মাথায় রাখা:
ই কমার্স ব্যবসা শুরু করার আগে আপনার সকল আইনি বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের জন্য ট্রেডমার্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় তাই এই ঝামেলাটা আগেই মিটিয়ে নিবেন।
৫: প্রোডাক্ট ডেলিভারি:
প্রোডাক্ট ডেলিভারি সবচাইতে সূক্ষ্ম এবং কার্যকরী দিক ই কমার্স বিজনেসের জন্য। সঠিক সময়ে যদি আপনি আপনার কাস্টমারকে প্রোডাক্টটি ডেলিভার করতে পারেন তাহলে এতে আপনার সুনাম বাড়বে ও ক্রেতা পুনরায় আপনার প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য ক্রয় করার চান্স বৃদ্ধি পাবে।
ই-কমার্স এর ওয়েবসাইট
ই-কমার্স বিজনেস সেটআপ এর ক্ষেত্রে ই-কমার্স ওয়েবসাইট খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ভাগ। কারণ এই ওয়েবসাইটে আপনার সকল পণ্যের তথ্য, পেমেন্ট সিস্টেম সহ ট্রিমস এন্ড কন্ডিশন এর সকল বিষয়গুলো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা থাকে। ওয়েবসাইটের কথা শুনলে অনেকে ভয় পেয়ে যান ভাবেন শুধু শুধু টাকা খরচ করে কি লাভ ফেসবুক ইনস্টাগ্রামে পোষ্ট দিয়ে দিয়ে পণ্য সেল করে নিবেন। কিন্তু একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট আপনার ব্যবসার জন্য কতটুকু আশীর্বাদ বয়ে আনতে পারে এবং এর কার্যকারিতা ও সক্ষমতা কতটুকু আসুন জেনে নেই।
গুরুত্বপূর্ণ: ওয়েবসাইট তৈরি করার নিয়ম
ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি:
ওয়েবসাইট থাকা মানে আপনি একটি বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান যার কাছ থেকে পণ্য ক্রয় করতে ক্রেতারা ভয় পাবেনা। ওয়েবসাইট আপনার পণ্যের ব্র্যান্ড আইডেন্টিটির প্রাণ।
প্রডাক্ট ডিসপ্লে করার সুবিধা:
ওয়েবসাইট সর্ব উৎকৃষ্ট মাধ্যম যেকোনো পণ্যের ডিসপ্লে করার জন্য কারণ এর মাধ্যমে আপনি আপনার ক্রেতাকে আকৃষ্ট করতে পারবেন।
বিক্রয় বৃদ্ধি:
ওয়েবসাইটের ভিজিটর সহ গুগল সার্চ ইঞ্জিন ও ফেসবুক থেকেও আপনি অনেক অনেক বিক্রেতা পেয়ে যাবেন শুধুমাত্র এই একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে।
এবার আসুন যেহেতু আমরা পুরোপুরি ভাবে জেনে গেছি ই-কমার্স ব্যবসা কি । তাহলে এবার ওয়েবসাইট তৈরির ধাপ গুলো এবং লক্ষনীয় বিষয় গুলো জেনে নেই।
*ডোমেইন ও হোস্টিং ক্রয়:
আপনার বাজেট অনুসারে ডোমেইন এবং হোস্টিং আপনি ক্রয় করে নিতে পারেন। ডোমেইন হচ্ছে কোম্পানির নাম। আপনি যে নামটি ক্রয় করে নিবেন এটি আর অন্যকে ক্রয় করতে পারবে না। ডোমেইন ক্রয় সময় আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে কম্পানি বিশ্বস্ত কিনা,আপনাকে পুরো ডোমেইন-এর কন্ট্রোল প্যানেল দিবে কিনা, ভবিষ্যতে অন্য ডোমেইন ট্রান্সফার করার সুযোগ থাকবে কিনা, প্রতিবছর চার্জ কেমন কাটে এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি কিনা।
গুরুত্বপূর্ণ: ডোমেইন হোস্টিং কেনার আগে
আর হোস্টিং ক্রয়ের ক্ষেত্রে আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে যেহেতু আপনি বাংলাদেশের সার্ভার এর ভিজিটর চাচ্ছেন তাহলে বাংলাদেশি হোস্টিং হলেই সবচাইতে বেশি সুবিধা আপনি ভোগ করতে পারবেন। এরপর আপনাকে লক্ষ্য করতে হবে ব্রান্ড ইমেইল , মানিব্যাক গ্যারান্টি,সিপ্যানেল অ্যাক্সেস এবং কাস্টমার কেয়ারের সার্ভিস আপনাকে সঠিকভাবে তারা প্রোভাইড করবে কিনা।
এইসব বিষয়গুলো সুনির্দিষ্ট করার পর আপনি ডোমেইন এবং হোস্টিং নিশ্চিন্তে কিনে ফেলতে পারেন। এরপর আপনাকে যে কাজগুলো করতে হবে আসুন সেগুলো সম্পর্কে জেনে নেই।
- ওয়েব ডিজাইন এবং ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর দিকে আপনাকে নজর দিতে হবে।
- ভালো একটি ওয়েবসাইট থিম ইউজ করতে হবে আপনি চাইলে এখন ফ্রি তে থিম ইউজ করতে পারবেন আর পরবর্তীতে আপগ্রেড করে নিতে পারবেন।
- আপনার ওয়েবসাইটের ডিজিটাল পেমেন্ট গেটওয় সুবিধাটি চালু করে নিবেন যাতে করে ক্রেতা খুব সহজে আপনার সাথে লেনদেন করতে পারে।
ই-কমার্স ব্যবসার সুবিধা
আমি মনে করি ই-কমার্স ব্যবসা কি জানার পর আপনাকে সর্বপ্রথম ই-কমার্স ব্যবসার সুবিধা গুলো জেনে নেওয়া উচিত। তাহলে চলুন দেরী না করে জেনে নেই।
- ই-কমার্স এমন একটি ব্যবসা যা আপনাকে ন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল একজন ব্যবসায়ী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার সুযোগ দিয়ে থাকে।
- ই-কমার্স ব্যবসার মাধ্যমে আপনি অতি সহজে ক্রেতার কাছে আপনার পণ্যের বিস্তারিত বিষয় গুলো পাঠিয়ে দিতে পারবেন।
- ই-কমার্স এমন একটি ব্যবসা যেই ব্যবসা শুরু করতে খুবই কম মূলধনের প্রয়োজন হয়।
- ই-কমার্স মহিলাদের জন্য একটি আশীর্বাদ কারণ তারা ঘরে বসেই ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন।
- আর্থিক লেনদেন করতে খুবই সুবিধা হয় এবং কম খরচে সব লেনদেন করে নেওয়া যায়।
আরো পড়ুন: শিওর ক্যাশ একাউন্ট খোলা, একাউন্ট চেক
শেষ কথা: আজকের এই ই কমার্স ব্যবসা কি আর্টিকেলটির মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে পুরোপুরি একটি সঠিক ই-কমার্স বিজনেস প্লান দিয়েছে। আপনি যদি এটি ফলো করেন তাহলে অবশ্যই আপনি ই-কমার্স এর দুনিয়ায় সফল হতে পারবেন। আর্টিকেলটি পড়ে আপনি যদি সামান্যতম উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে ভুলবেন না।