বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম
বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম | বিতর নামাজে দোয়া কুনুত না পারলে
বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম কি? বা বিতর নামাজ কিভাবে পড়তে হয়? আপনারা যারা বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম জানেন না তাদের জন্য আমরা বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম নিয়ে এসেছি। বিতর নামাজ নিয়ে এখন পর্যন্ত অনেকের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে। আপনাদের সকল প্রশ্নের উত্তর এবং বিতর নামাজের সঠিক তথ্য তুলে ধরব।
যাতে করে আপনারা সঠিক নিয়মে বিতর নামাজ আদায় করতে পারেন এবং বিতর নামাজ আদায় না করার ফলে কি ধরনের শাস্তি রয়েছে তা জানতে পারবেন। বিতর নামাযে নির্দিষ্ট কোন দোয়া আছে কিনাসম্পর্কেও জানতে পারবেন। আমরা সকলেই জানি যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আমাদের উপর ফরজ কিন্তু এই নামাজ গুলো স্বভাব একেক রকম হয় যেমনঃ ফরজ নামাজের সওয়াব একরকম, সুন্নত নামাজের সওয়াব আরেক রকম। সুতরাংনফল এবং ওয়াজিব নামাজের সওয়াব ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তাহলে আমরা আর দেরি না করে জেনে নেই বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম এবং বিতর নামাজের তথ্য।
আরো দেখুনঃ তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম.
বিতর নামাজ কত রাকাত
ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। আর এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে বিতর নামাজ অর্থাৎ এশার ওয়াক্ত ফরজ এবং সুন্নত নামাজ আদায় করার পর যে বিতর নামাজ পড়া হয় সেই বিতর নামাজের নিয়ম এবং রাকাত সংখ্যা ভিন্ন। কারণ বিতর নামাজের কত রাকাত এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে কোথাও থেকে আপনারা যা জানতে পারবেন কোথাও বিতর নামায তিন রাকাত আবার কোথাও বিতর নামায এক রাকাত। এখানে মূলত আপনাদের জন্য দুটি হাদিস বা নিয়ম সত্যি।
আবু সালমা ইবনে আবদুর রহমান থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করেছেন, রমজানের নামাজ কেমন হতো। তখন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু এ প্রশ্নের উত্তরে বললেন, রমজানে এবং রমজানের বাইরে রাসুল (সাঃ) ১১ রাকাতের বেশি পড়তেন না। আর এই নামাজ গুলোর মধ্যে প্রথমে চার রাকাত এমনভাবে পড়তেন তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করুন এরপর তিনি আরও চার রাকাত পড়তেন যার সৌন্দর্য এবং দীর্ঘ আমার বলাই বাহুল্য। এবং এরপর তিনি বিতর নামাজ পড়তেন। (সহিহ বুখারি- ১/১৫৪; হাদিস- ১১৪৭; সহিহ মুসলিম- ১/২৫৪; হাদিস- ৭৩৮; সুনানে নাসায়ি- ১/২৪৮; হাদিস- ১৬৯৭)।
অন্য একটি হাদিসে বর্ণনা এসেছে সাদ ইবনে হিশাম (রহ.) বর্ণনা করেন, আয়েশা রাদিয়ালাহু আনহু তাকে বলেছেন যে রাসূল (সাঃ)দুই রাকাত সালাত সালাম ফেরাতে না। (সুনানে নাসায়ি- ১/২৪৮; হাদিস- ১৬৯৮; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা- ৪/৪৯৪; হাদিস- ৬৯১২)।
সুতরাং এ থেকে বুঝা যায় যে বিতর নামায সাধারণত তিন রাকাত। বিতর নামাজ সকল মুসল্লিদের পড়া উচিত কারণ এটি ওয়াজিব।
বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম
আমরা সাধারণত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়ম রীতি মেনে চলেন নামাজ আদায় করি কিন্তু সেই নিয়মরীতি বিতর নামাজে নয়। বিতর নামাজের নিয়ম অন্যান্য নামাজের তুলনায় অন্যরকম। তবে একদম অন্যরকম তা নয় অন্যান্য নামাজের সাথে কিছুটা মিল রয়েছে।
নিম্নে বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম উল্লেখ করা হলো-
- প্রথম অজু করে কিবলামুখী হয়ে এশার সালাত আদায় করতে হবে। এশার সালাতের যেসকল সুন্নত এবং ফরজ রয়েছে সে সকল সালাত সুষ্ঠুভাবে আদায় করতে হবে।
- এর পর বিতরের নামাজের জন্য নিয়ত করতে হবে। বিতর নামাজের নিয়ত করার সময় অবশ্যই ওয়াজ কথাটি উল্লেখ রাখতে হবে কারণ বিতর নামাজ পড়া হচ্ছে ওয়াজিব।
- এরপর আমরা সাধারণত দুই রাকাত নামাজ কিভাবে আদায় করি ঠিক কিভাবে আদায় করতে হবে কিন্তু তাশাহুদ পড়ে দাঁড়িয়ে যেতে হবে।
- এখন বিসমিল্লাহ বলে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য আরেকটি সূরা মিলিয়ে পাঠ করতে হবে।
- সূরা পাঠ করা হয়ে গেলে নামাজের প্রথম এরকম করে আমরা আল্লাহু আকবার বলে থাকি ঠিক সেভাবেই হাত ছেড়ে দাঁড়িয়ে আল্লাহু আকবার পড়ে নিতে হবে।
- আল্লাহু আকবার বলা পরে বিসমিল্লাহ পাঠ করে দোয়া কুনুত পাঠ করতে হবে। বিতর নামাজের জন্য আপনাদের অবশ্যই দোয়া কুনুত শিখে নিতে হবে। কারণ দোয়া কুনুত বিতর নামাজের জন্য নাজিল হয়েছে।
- এরপর যথারীতি রুকু এবং সেজদা দেয়ার পর তাশাহুদ, দরুদ শরীফ এবং মা-সূরা পাঠ করতে হবে।
- সর্ব শেষে মোনাজাতের মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করতে হবে। বিতর নামাজের নিয়ত বান্দা আল্লাহর নিকট কিছু চেয়ে থাকে অথবা মা প্রার্থনা করা হয়।
নোটঃ আপনারা চাইলে এশার নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে যেতে পারেন এবং পরবর্তী সময়ে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার পর বিতরের নামাজ আদায় করতে পারেন।
আরো দেখুনঃ সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম.
বিতর নামাজে দোয়া কুনুত না পারলে
বিতর নামাজের দোয়া হচ্ছে দোয়া কুনুত। কিন্তু বিতর নামাজে কেউ যদি দোয়া কুনুত না পড়তে পারে তাহলে তার পরিবর্তে অন্য কোন দোয়া পড়া যাবে নাকি এ নিয়ে অনেকের মধ্যে প্রশ্ন থাকে। তাই আপনাদের মধ্যে এই দ্বিধাদ্বন্দ্ব টি দূর করার জন্য আমরা এর সমাধান নিয়ে এসেছি। যাতে করে আপনারা আমাদের এখান থেকে বিতর নামাজে দোয়া কুনুত না পড়লে বা এর পরিবর্তে কোন দোয়া পড়া যায় সে সম্পর্কে জানতে পারেন।
আপনাদের জন্য বিতর নামাজের দোয়া কুনুত না পড়লে যে সকল দোয়া তা নিম্নে দেয়া হল। কিন্তু আপনাদের অবশ্যই দোয়া কুনুত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মুখস্থ করে নিতে হবে কারণ রাসূল (সাঃ) বলেছেন এটি সুন্নাত। আমরা আপনাদেরকে যে সকল দুয়ার কথা বর্তমানে জানাবো হোক সেই সকল গ্রাহকগণ হোক আমরা যে যোগসুত্র হতে পেয়েছি তার প্রমাণ দেয়া হলো- ( আল-বাহরুর রায়িক- ২/৪২-৪৩; আল-মুহিতুল বুরহানি- ২/২৭০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া- ২/৩৪৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া- ১/১৭০; রাদ্দুল মুহতার- ২/৭)
বিতর নামাজে দোয়া কুনুত এর পরিবর্তে সূরা ইখলাস পড়া যাবে
বিতর নামাজে দোয়া কুনুত সকল মুসলিমদের মুখস্ত করা উচিত কারণ এটি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সুন্নাত।তবে অনেকে মনে করেন বিতর নামাজে দোয়া কুনুত এর পরিবর্তে সূরা ইখলাস তিনবার পড়া যায়। কিন্তু আসলে দোয়াকোনোদ এর পরিবর্তে সূরা ইখলাস তিনবার পড়ার কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। আর এর কারণ হচ্ছে দোয়া কুনুত এবং সূরা ইখলাস এর মধ্যে কোন মিল নেই। দোয়া কুনুত এর উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর কাছে দোয়া করা।
তবে নির্দিষ্ট দোয়া ছাড়া অন্য যে কোন দোয়া পড়লে বিতর নামাজ আদায় করা হবে এবং সেইসাথে নামাজ শুদ্ধ হয়ে যাবে। তবে একটি হাদিসে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতায়িনুকা পাঠ করা সুন্নাত। তবে আপনাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে কেউ যদি এক্ষেত্রে কোন দোয়ায় না পড়ে তাহলে পুনরায় আবার নামাজ শুরু করতে হবে। তাছাড়া এ নামাজ পড়ি শুদ্ধ হবে না এবং বিতর নামাজের ওয়াজিব আদায় করা হবে না। (রদ্দুল মুহতার- ১/৪৬৮; আল-বাহরুর রায়েক- ২/৪২; হাশিয়াতুত তহতাভি আলাদ্দুর- ১/২৮০; আল-মুহিতুল বুরহানি- ২/২৭০)।
একটি হাদীসে এসেছে যে, যে এর ধারা দোয়া কুনুত হয়ে যাবে তবে দোয়া সম্বলিত এক বা একাধিক কুরআনের আয়াত পড়লে কুনুত এর উদ্দেশ্য অর্জন হয়ে যাবে। কিন্তু হাদীসে এসেছে দোয়া কুনুত দোয়া কুনুত পাঠ করা উত্তম। (আল আজকার, ইমাম নববী- ৫০)।
আরো দেখুনঃ
উপসংহারঃ আশা করছি আপনারা আমাদের এই আর্টিকেল থেকে বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম জানতে পেরেছেন এবং বেতর নামাজের অন্যান্য তথ্য জানতে পেরেছেন। তবে অবশ্যই আমাদের সকলকে মনে রাখতে হবে যে বিতর নামাজে দোয়া কুনুত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মুখস্থ করে নিতে হবে। কারণ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সুন্নত হচ্ছে বিতর নামাজের দোয়া মুখস্থ করা। তবে আপনারা যদি এই বিতর নামাজ সম্পর্কিত অথবা ইসলামিক অন্যান্য নামাজ সম্পর্কিত আরো তথ্য জানতে চান তাহলে আমাদেরকে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। জাযাকাল্লাহ।
رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِی الدُّنْیَا حَسَنَةً وَّ فِی الْاٰخِرَةِ حَسَنَةً وَّ قِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণ : রাব্বানা আতিনা ফিদ-দুনিয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল আখিরাতে হাসানাতাঁও ওয়া কিনা আজাবান নার।
অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন; আখিরাতেও কল্যাণ দান করুন। এবং আমাদের জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা করুন। (সুরা বাকারা, আয়াত : ২০১)
অথবা আপনি কয়েকবার করে নিম্নোক্ত দুইটি দোয়া বা ইসতিগফারও পড়তে পারেন—
أَللّهُمَّ اغْفِرْ لَنَا
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগ ফির লানা। অর্থ : হে আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন।
أَسْتَغْفِرُ اللهَ
উচ্চারণ : আসতাগফিরুল্লাহ। অর্থ : হে আল্লহ, আমাকে ক্ষমা করুন।