ইভিএম ভোট পদ্ধতি | ইভিএম এর পূর্ণরূপ কি?
ইভিএম ভোট পদ্ধতি | ইভিএম মেশিনে ভোট দেওয়ার নিয়ম | ইভিএম এর সুবিধ-অসুবিধা
ভোট ডান বাঙ্গালি জাতির নাগরিক অধিকার। ১৮ বছর বয়স হলেই একজন বাঙ্গালি তার অধিকার মোতাবেক ভোট দান করতে পারে। ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তিনি তার পছন্দ অনুযায়ী প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে। বর্তমানে সকল কিছুই ডিজিটালে রূপান্তর করা হয়েছে। এমন কি এই ভোট দান পদ্ধতিও বর্তমানে ডিজিটাল করা হয়েছে। অর্থাৎ, ভোট দান পদ্ধতি এখন ইভিএম এ নেয়া হয় কিংবা প্রদান করা হয়। ইভিএম ভোট পদ্ধতি চালু করা হয়েছে মূলত ভোট দান কারীর সুবিধা পাশাপাশি ভোট গণনা করার সুবিধা সব কিছু চিন্তা করে।
আজকের আর্টিকেলটি আলোচনা করা হচ্ছে ইভিএম ভোট পদ্ধতি নিয়ে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানতে পারবো ইভিএম অর্থ, ইভিএম ভোট পদ্ধতি, সুবিধা, অসুবিধা সকল কিছু। চলুন তাহলে বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়া যাক।
গুরুত্বপূর্ণ: অনলাইন থেকে আপনার আইডি কার্ড সংগ্রহ করুন.
ইভিএম এর পূর্ণরূপ কি? | What Is The Full Form Of EVM?
ইভিএম (EVM) একটি ইংরেজি শব্দ। এর পূর্ণরূপ হচ্ছে “Electronic Voting Machine.” বর্তমানে প্রায় সকল দেশেই ভোটের কার্য সম্পাদনের জন্য ইভিএম ব্যবহার করা হয়। এতে নেই কোনো জটিলতা কিংবা ভুল হওয়ার সম্ভাবনা।
ইভিএম কি?
ইভিএম মূলত একটি ইলেক্ট্রনিক মেশিন। যার মাধ্যমে একটি দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোট প্রয়োগ এবং ভোট গণনা করা হয়। সংক্ষিপ্ত আকারে একে আবার ই-ভোটিংও বলা হয়ে থাকে। এই ইভিএম এর মাধ্যমে একজন ভোটার প্রার্থী কখনোই একটির বেশি ভোট প্রদান করতে পারে না। ফলে এতে জালিয়াতি হওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণে কমে যায়।
এই মেশিনটিতে থাকে একটি মাইক্রোচিপ যা কিনা পূর্ব প্রোগ্রামিং করা থাকে। ফলে প্রতিটি ভোট খুব দ্রুততার সাথে গণনা করে সঠিক ফলাফল প্রদান করতে সক্ষম হয়।
বেশ কয়েকটি ইউনিট নিয়ে এই ইভিএম তৈরি হয়। যেমনঃ ব্যালট ইউনিট, কন্ট্রোল ইউনিট, ডিসপ্লে ইউনিট, ব্যাটারি ইউনিট, স্মার্ট কার্ড এবং মাস্টার কার্ড।
ইভিএম কি বা Bangladesh Voting System সম্পর্কে তো জানা হলো। এবার তাহলে চলুন জেনে নেই এই ইভিএম এর আবিষ্কারক সম্পর্কে।
আরো দেখুন: ভোটার তালিকা দেখার উপায়.
ইভিএম এর আবিষ্কারক কে?
ইভিএম সর্বপ্রথম ১৮৯২ সালে Myers নামক এক ব্যক্তি আবিষ্কার করেন। তবে ইন্ডিয়ান এক ব্যক্তি Haneefa পুনরায় ১৯৮০ সালের ১৫ অক্টোবর এই ইভিএম আবিষ্কার করেন। তবে বাংলাদেশে এর ব্যবহার শুরু হয় মূলত ২০০৭ সালে।
২০০৭ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের কাছে বুয়েটের আইআইসিটি বিভাগে চেয়ারম্যান ডঃ এস এম লুতফর কবির এই ইভিএম এর প্রকল্প জমা দেন এবং তাকে সহায়তা করে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান পাইল্যাব বাংলাদেশ। মূলত ২০১০ সালে ১৭ জুন ইভিএম ব্যবহার করে সফল হয় এবং তা চট্রগ্রাম সিটিকর্পোরেশন নির্বাচনে।
ইভিএম ভোট পদ্ধতি
ইভিএম ভোট পদ্ধতি মূলত দ্রুততার সাথে ভোট প্রয়োগ, ভোট গণনা করণে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোট প্রয়োগে যে ইলেকট্রনিক মেশিন ব্যবহার করা হয় এবং সেই পুরো প্রক্রিয়াটিকেই ইভিএম ভোট পদ্ধতি বলা হয়।
এটি একটি ইলেক্ট্রনিক মেশিন। এই Bangladesh Voting System এর মাধ্যমে এক সাথে ৪ হাজার ভোট দেয়া যায়। আরো শুনলে অবাক হবেন যে, এই ইভিএম ভোট পদ্ধতি এর মেশিনে এক সাথে ৬৪ জন প্রার্থীর তালিকা রাখা যায় এবং এই ইভিএম ভোট পদ্ধতির মাধ্যমে মাত্র ১৪ সেকেন্ডে একজন ভোট প্রার্থী তার পছন্দ অনুযায়ী ভোট প্রদান করতে পারে।
ইভিএম মেশিনে ভোট দেয়ার নিয়ম
ইভিএম মেশিনটিতে থাকে একটি মাইক্রোচিপ। মাইক্রোচিপে থাকে বেশ কয়েকটি ইউনিট। ব্যালট ইউনিট তাদের মধ্যে অন্যতম। এটির মাধ্যমেই সাধারণত ভোট দেয়া হয়। ভোট কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারীর কাছে থাকে ইভিএম এর কন্ট্রোল ইউনিটটি। এটির সামনে থাকে ডিসপ্লে ইউনিট তারপর থাকে স্টার্ট সুইচ, ব্যালট সুইচ, মেমরি রিসেট সুইচ ইত্যাদি। স্টার্ট সুইচ চাপ দিলেই ভোট দিতে পারাটা শুরু হয়।
এরপর ব্যালট সুইচ চাপ দেয়ার পর দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী ভোট প্রার্থীকে ভোট দেয়ার বুথে পাঠায়। এই সুইচটি চাপ দিলেই ব্যালট ইউনিট চালু হয় এবং একটি সবুজ বাতি জ্বলে থাকতে দেখা যায়। অর্থাৎ, ইভিএম চালু হয়েছে এবং ভোটার প্রার্থী তার পছন্দ অনুযায়ী প্রতীকী চিহ্নটির পাশে চাপ দিলেই ভোট গৃহীত হয়। ভোট গৃহীত হলে বা সম্পন্ন হলে ব্যাটল ইউনিটটিতে লাল বাতি জ্বলে উঠে। এভাবেই মূলত ইভিএম মেশিনে ভোট দেয়া হয় বা গৃহীত হয়।
গুরুত্বপূর্ণ: ভোটার আইডি কার্ড চেক করার নিয়ম.
ইভিএম এর সুবিধ-অসুবিধা
এতসময় ধরে আমরা ইভিএম সম্পর্কে অনেক তথ্য জানলাম। এবার চলুন এর কিছু সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করা যাক।
ইভিএম পদ্ধতিতে যেমন সুষ্ঠ ভাবে ভোট প্রদান করা যায় কিংবা সহজে গণনা করা যায় তেমনি আবার এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে। চলুন সুবিধা-অসুবিধা দুটোই জেনে নেই।
সুবিধাঃ
- ইভিএম ভোট পদ্ধতি ব্যবহার করার ফলে লক্ষ লক্ষ কাগজের ব্যবহার এবং সকল ধরণের খরচ থেকে সাশ্রয় করা সম্ভব হয়।
- ৪/৫ টি জাতীয় নির্বাচন করা সম্ভব হয় এই একটি মাত্র ইভিএম মেশিন ব্যবহার করে।
- দ্রুত ভোট গ্রহণ এবং ভোট গণনা করা সম্ভব হয়।
- এতে কোনো প্রকার ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
- এই পদ্ধতিতে কোনো ভোটারের ভোট বাতিল হয় না।
অসুবিধাঃ
- মার্কিন আইসিটি বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বাংলাদেশে এবং ভারতের ইভিএম মেশিন গুলো জালিয়াতি প্রতিরোধক নয়।
- গোপনে ইভিএম সরবরাহ করা যায় এবং কন্ট্রোল ইউনিট সেট করে দিলে গোপনে ইভিএমে ভোট প্রদান করা যায়।
- মাইক্রোকন্ট্রোলার চিপ নিয়ন্ত্রণ করে অসাধুরা কয়েকশ মিটার দূর থেকেও এই ইভিএম ব্যবহার করতে পারে।
ইভিএম ভোট পদ্ধতি FAQ
১. ইভিএম এর পূর্ণরূপ কি?
ইভিএম এর পূর্ণরূপ হলো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (Electronic Voting Machine)।
২. ইভিএমে কি ভোট চুরি করা যায়?
মার্কিন কম্পিউটার বিজ্ঞানী এলেক্স হাল্ডারম্যান দেখিয়েছেন যে, ট্রেস করার কোন পদ্ধতি না রেখে কিভাবে আর কত সহজে ইভিএম মেশিন হ্যাক করার মাধ্যমে ভোটের সঠিক ফলাফল পরিবর্তন করা সম্ভব।
৩. ইভিএম এর আবিষ্কারক কে?
২০০৭ সালে বুয়েটের তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান ডঃ এস এম লুৎফল কবির ইভিএম তৈরির প্রকল্প তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে জমা দেন। তিনি সেই সময় আইআইসিটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন আর তার হাত ধরে এই ইভিএম মেশিনের আবির্ভাব।
৪. ইভিএমে কত ভোট রেকর্ড করা যায়?
ইভিএমে সর্ব্বোচ্চ ২০০০ ভোট পর্যন্ত রেকর্ড করা সম্ভব। সাধারণত একটি ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটারের সংখ্যা ১৫০০ এর বেশি হয় না যা ইভিএমের ধারণক্ষমতার মধ্যে রয়েছে।
৫. ভোট গণনার জন্য কোন মেশিন ব্যবহার করা হয়?
ভোট গণনার জন্য কাউন্টিং মেশিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে যা ব্যালট গণনা করার জন্য অপটিক্যাল স্ক্যানিং/মার্ক-সেন্স রিডিং ডিভাইস বা অনুরূপ উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করার মাধ্যমে সম্পাদিত হয়ে থাকে।
৬. ইভিএম থাকা কি বাধ্যতামূলক ভোটিং এর জন্য?
না, ইভিএম বা ইলিকট্রনিক ভোটিং মেশিন থাকা বাধ্যতামূলক না। কিন্তু ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ঐচ্ছিক এবং ঝুঁকিমুক্ত হওয়ায় এটির জনপ্রিয়তা সাধারণ ভোটিং সিস্টেম থেকে বেশি। এই মেশিনের মাধ্যমে ব্যক্তি বিশেষ গোপনীয়তার সাথে নিজের প্রিয় দলকে ভোটদান করতে পারে যা জানা জটিল।
৭. বাংলাদেশে ই ভোটিং কবে চালু হয়?
বাংলাদেশে ই ভোটিং (E-Voting) বা ইলেকট্রনিক মেশিনের মাধ্যমে ভোট একটি নতুন পদ্ধতি। পূর্বের ভোটিং সিস্টেমের সাথে নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে এই সিস্টেম। এই ভোটিং সিস্টেম ২০০৭ সালে ঢাকা অফিসার্স ক্লাবের কার্যকরী সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রথম শুরু হয়। এরপর দেশের বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অল্প পরিসরে ব্যবহার করা হলেও জাতীয় নির্বাচনের এখন পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়নি।
পরিশেষে বলা যায়, ইভিএম ভোট পদ্ধতি ভোট প্রদান এবং গ্রহণে খুব সহজ একটি পদ্ধতি। যদি এর সঠিক ব্যবহার করা হয় তবে ভোট কেন্দ্রে এর জালিয়াতি রোধ করা সম্ভব এবং খুব দ্রুততার সাথে সঠিক গণনা করা মাধ্যমে ভোটের কার্য সম্পাদন করা সম্ভব।