ইভিএম ভোট পদ্ধতি
ইভিএম ভোট পদ্ধতি | ইভিএম মেশিনে ভোট দেওয়ার নিয়ম
ভোট ডান বাঙ্গালি জাতির নাগরিক অধিকার। ১৮ বছর বয়স হলেই একজন বাঙ্গালি তার অধিকার মোতাবেক ভোট দান করতে পারে। ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তিনি তার পছন্দ অনুযায়ী প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে। বর্তমানে সকল কিছুই ডিজিটালে রূপান্তর করা হয়েছে। এমন কি এই ভোট দান পদ্ধতিও বর্তমানে ডিজিটাল করা হয়েছে। অর্থাৎ, ভোট দান পদ্ধতি এখন ইভিএম এ নেয়া হয় কিংবা প্রদান করা হয়। ইভিএম ভোট পদ্ধতি চালু করা হয়েছে মূলত ভোট দান কারীর সুবিধা পাশাপাশি ভোট গণনা করার সুবিধা সব কিছু চিন্তা করে।
আজকের আর্টিকেলটি আলোচনা করা হচ্ছে ইভিএম ভোট পদ্ধতি নিয়ে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানতে পারবো ইভিএম অর্থ, ইভিএম ভোট পদ্ধতি, সুবিধা, অসুবিধা সকল কিছু। চলুন তাহলে বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়া যাক।
গুরুত্বপূর্ণ: অনলাইন থেকে আপনার আইডি কার্ড সংগ্রহ করুন.
ইভিএম ভোট পদ্ধতি
ইভিএম ভোট পদ্ধতি মূলত দ্রুততার সাথে ভোট প্রয়োগ, ভোট গণনা করণে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোট প্রয়োগে যে ইলেকট্রনিক মেশিন ব্যবহার করা হয় এবং সেই পুরো প্রক্রিয়াটিকেই ইভিএম ভোট পদ্ধতি বলা হয়।
এটি একটি ইলেক্ট্রনিক মেশিন। এই ইভিএম ভোট পদ্ধতি এর মাধ্যমে এক সাথে ৪ হাজার ভোট দেয়া যায়। আরো শুনলে অবাক হবেন যে, এই ইভিএম ভোট পদ্ধতি এর মেশিনে এক সাথে ৬৪ জন প্রার্থীর তালিকা রাখা যায় এবং এই ইভিএম ভোট পদ্ধতির মাধ্যমে মাত্র ১৪ সেকেন্ডে একজন ভোট প্রার্থী তার পছন্দ অনুযায়ী ভোট প্রদান করতে পারে।
ইভিএম এর পূর্ণরূপ কি?
ইভিএম (EVM) একটি ইংরেজি শব্দ। এর পূর্ণরূপ হচ্ছে “Electronic Voting Machine.” বর্তমানে প্রায় সকল দেশেই ভোটের কার্য সম্পাদনের জন্য ইভিএম ব্যবহার করা হয়। এতে নেই কোনো জটিলতা কিংবা ভুল হওয়ার সম্ভাবনা।
ইভিএম কি?
ইভিএম মূলত একটি ইলেক্ট্রনিক মেশিন। যার মাধ্যমে একটি দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোট প্রয়োগ এবং ভোট গণনা করা হয়। সংক্ষিপ্ত আকারে একে আবার ই-ভোটিংও বলা হয়ে থাকে। এই ইভিএম এর মাধ্যমে একজন ভোটার প্রার্থী কখনোই একটির বেশি ভোট প্রদান করতে পারে না। ফলে এতে জালিয়াতি হওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণে কমে যায়।
এই মেশিনটিতে থাকে একটি মাইক্রোচিপ যা কিনা পূর্ব প্রোগ্রামিং করা থাকে। ফলে প্রতিটি ভোট খুব দ্রুততার সাথে গণনা করে সঠিক ফলাফল প্রদান করতে সক্ষম হয়।
বেশ কয়েকটি ইউনিট নিয়ে এই ইভিএম তৈরি হয়। যেমনঃ ব্যালট ইউনিট, কন্ট্রোল ইউনিট, ডিসপ্লে ইউনিট, ব্যাটারি ইউনিট, স্মার্ট কার্ড এবং মাস্টার কার্ড।
ইভিএম কি বা ইভিএম ভোট পদ্ধতি সম্পর্কে তো জানা হলো। এবার তাহলে চলুন জেনে নেই এই ইভিএম এর আবিষ্কারক সম্পর্কে।
আরো দেখুন: ভোটার তালিকা দেখার উপায়.
ইভিএম এর আবিষ্কারক কে?
ইভিএম সর্বপ্রথম ১৮৯২ সালে Myers নামক এক ব্যক্তি আবিষ্কার করেন। তবে ইন্ডিয়ান এক ব্যক্তি Haneefa পুনরায় ১৯৮০ সালের ১৫ অক্টোবর এই ইভিএম আবিষ্কার করেন। তবে বাংলাদেশে এর ব্যবহার শুরু হয় মূলত ২০০৭ সালে।
২০০৭ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের কাছে বুয়েটের আইআইসিটি বিভাগে চেয়ারম্যান ডঃ এস এম লুতফর কবির এই ইভিএম এর প্রকল্প জমা দেন এবং তাকে সহায়তা করে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান পাইল্যাব বাংলাদেশ। মূলত ২০১০ সালে ১৭ জুন ইভিএম ব্যবহার করে সফল হয় এবং তা চট্রগ্রাম সিটিকর্পোরেশন নির্বাচনে।
ইভিএম মেশিনে ভোট দেয়ার নিয়ম
ইভিএম মেশিনটিতে থাকে একটি মাইক্রোচিপ। মাইক্রোচিপে থাকে বেশ কয়েকটি ইউনিট। ব্যালট ইউনিট তাদের মধ্যে অন্যতম। এটির মাধ্যমেই সাধারণত ভোট দেয়া হয়। ভোট কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারীর কাছে থাকে ইভিএম এর কন্ট্রোল ইউনিটটি। এটির সামনে থাকে ডিসপ্লে ইউনিট তারপর থাকে স্টার্ট সুইচ, ব্যালট সুইচ, মেমরি রিসেট সুইচ ইত্যাদি। স্টার্ট সুইচ চাপ দিলেই ভোট দিতে পারাটা শুরু হয়।
এরপর ব্যালট সুইচ চাপ দেয়ার পর দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী ভোট প্রার্থীকে ভোট দেয়ার বুথে পাঠায়। এই সুইচটি চাপ দিলেই ব্যালট ইউনিট চালু হয় এবং একটি সবুজ বাতি জ্বলে থাকতে দেখা যায়। অর্থাৎ, ইভিএম চালু হয়েছে এবং ভোটার প্রার্থী তার পছন্দ অনুযায়ী প্রতীকী চিহ্নটির পাশে চাপ দিলেই ভোট গৃহীত হয়। ভোট গৃহীত হলে বা সম্পন্ন হলে ব্যাটল ইউনিটটিতে লাল বাতি জ্বলে উঠে। এভাবেই মূলত ইভিএম মেশিনে ভোট দেয়া হয় বা গৃহীত হয়।
গুরুত্বপূর্ণ: ভোটার আইডি কার্ড চেক করার নিয়ম.
ইভিএম এর সুবিধ-অসুবিধা
এতসময় ধরে আমরা ইভিএম সম্পর্কে অনেক তথ্য জানলাম। এবার চলুন এর কিছু সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করা যাক।
ইভিএম পদ্ধতিতে যেমন সুষ্ঠ ভাবে ভোট প্রদান করা যায় কিংবা সহজে গণনা করা যায় তেমনি আবার এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে। চলুন সুবিধা-অসুবিধা দুটোই জেনে নেই।
সুবিধাঃ
- ইভিএম ভোট পদ্ধতি ব্যবহার করার ফলে লক্ষ লক্ষ কাগজের ব্যবহার এবং সকল ধরণের খরচ থেকে সাশ্রয় করা সম্ভব হয়।
- ৪/৫ টি জাতীয় নির্বাচন করা সম্ভব হয় এই একটি মাত্র ইভিএম মেশিন ব্যবহার করে।
- দ্রুত ভোট গ্রহণ এবং ভোট গণনা করা সম্ভব হয়।
- এতে কোনো প্রকার ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
- এই পদ্ধতিতে কোনো ভোটারের ভোট বাতিল হয় না।
অসুবিধাঃ
- মার্কিন আইসিটি বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বাংলাদেশে এবং ভারতের ইভিএম মেশিন গুলো জালিয়াতি প্রতিরোধক নয়।
- গোপনে ইভিএম সরবরাহ করা যায় এবং কন্ট্রোল ইউনিট সেট করে দিলে গোপনে ইভিএমে ভোট প্রদান করা যায়।
- মাইক্রোকন্ট্রোলার চিপ নিয়ন্ত্রণ করে অসাধুরা কয়েকশ মিটার দূর থেকেও এই ইভিএম ব্যবহার করতে পারে।
পরিশেষে বলা যায়, ইভিএম ভোট পদ্ধতি ভোট প্রদান এবং গ্রহণে খুব সহজ একটি পদ্ধতি। যদি এর সঠিক ব্যবহার করা হয় তবে ভোট কেন্দ্রে এর জালিয়াতি রোধ করা সম্ভব এবং খুব দ্রুততার সাথে সঠিক গণনা করা মাধ্যমে ভোটের কার্য সম্পাদন করা সম্ভব।