সিজারের কতদিন পর বাচ্চা নেওয়া যায়
সিজারের কতদিন পর বাচ্চা নেওয়া যায় | সিজারের কতদিন পর জার্নি করা যায়
কিছু বিশেষ কারনে যখন নরমাল প্রসব সম্ভব হয় না তখনই সিজারিয়ান পদ্ধতি অবলম্ব করা হয়। সিজারের সময় মায়ের শরীর এর উপর অনেক চাপ পড়ে। অনেকেই বলে থাকেন আমার ৬ মাস আছে বাচ্চা হয়েছে আমি কি পুনরায় বাচ্চা নিতে পারি বা বলে থাকেন সিজারের কতদিন পর বাচ্চা নেওয়া যায়? এইসব প্রশ্নের উওর নিয়েই আজ আমরা হাজির হয়েছি। চলুন বিষয়টি একটু বিস্তারিত ভাবে জানি।
সিজারের কতদিন পর সহবাস করা যায়?
সিজারের পর সবার মনের মাঝেই বার বার এই প্রশ্ন জাগতে থাকে আমি কবে আমার যৌনজীবনে ফিরে যেতে পারবো। সিজারিয়ান জটিলতা না থাকলে ৬ সপ্তাহ পরই আপনি যৌনমিলন করতে পারবেন কিন্তু যদি জটিলতা থাকে তাহলে আপনাকে ৩ মাস অপেক্ষা করতে হতে পারে। আর বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া থাকে প্রথম ২/১ সপ্তাহের মাঝে কোন ভাবেই যেন যৌনমিলন না করা হয় কারন এতে মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার সম্ভনাটা বেশি থাকে।
দেখুন: অনিয়মিত মাসিক হলে বাচ্চা নেওয়ার উপায়।
সিজারের পর কি কি সেক্স পজিশন গুলো এড়িয়ে চলা উচিত?
সিজারের পর আপনার শরীরটি আগের মত নেই সামান্যতম ভুলে আপনার জীবন নিয়ে টান দিতে পারে। আপনাকে স্বাভাবিক হতে বছর খানিক লেগে যাব তাই সিজারের কতদিন পর বাচ্চা নেওয়া যায়? এই প্রশ্নের উওর জানার আগে আপনার জানা দরকার সিজারের পর কি কি সেক্স পজিশন গুলো এড়িয়ে চলা উচিত?
মিশনারি পজিশন টি আপনার এড়ানো উচিত কারন এমন কোন পজিশন চুজ করা যাবে না যাতে আপনার পেটের উপর চাপ পড়ে। ওম্যান–অন–টপ পজিশনটি ব্যবহার করে দেখতে পারেব বা একটি পাশে ফিরে বা পিছন থেকে কোন মনপছন্দ পজিশন চুজ করতে পারেন।
সিজারের কতদিন পর বাচ্চা নেওয়া যায়?
সিজারিয়ান মা এর শরীর অনেক ক্রিটিকাল সময় ফেস করে যার কারনে আবার বাচ্চা নেওয়ার আগে অনেক ভেবেচিন্তে নিতে হবে। সাধারণ সিজারের ২ বছরের আগে বাচ্চা না নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কারন আপনার শরীর আগের সিজারিয়ান ক্রিটিকাল পজিশন থেকে পুনরায় উজ্জীবিত হতে সময় লাগবে ২ বছর। এর আগে আপনি বাচ্চা নেওয়ার কথা ভাবলে আপনি আপনার মৃত্যুর ঝুকি ডেকে আনছেন।
দেখুন: গর্ভবতী হওয়ার প্রথম মাসের লক্ষণ।
সিজারের কতদিন পর জার্নি করা যায়?
সিজারিয়ান (সি-সেকশন) প্রসবের বিভিন্ন জটিলতা রয়েছে। সি-সেকশনের প্রদাহ প্রতিরোধ করার জন্য, আপনার পাগুলিকে বেশিরভাগ সময়ে উঁচু রাখা উচিত। সি-সেকশন হওয়ার পর অন্তত ছয় সপ্তাহ বা ৪২ দিন আপনাকে বিশ্রাম নিতে হবে এরপর আপনি জার্নি করতে পারবেন।
সিজারের কতদিন পর ভারী কাজ করা যায়?
যেকোন ধরণের ভারী কাজ বা ব্যায়াম, যেমন অ্যারোবিকস, দৌড়ানো এবং প্রতিরোধ বা ওজন ধারণের প্রশিক্ষণ শুরু করার আগে কমপক্ষে ১২ সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। বাচ্ছা প্রসবের পর হরমোনগুলি প্রায় ৬ মাস পরে আপনার জয়েন্টগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে তাই ভারী কাজ বা ব্যায়াম করতে চাইলে তা আস্তে আস্তে শুরু করুন।
দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য আপনি হালকা হাঁটাহাঁটি করা বা ঘুরে বেড়াতে পারেন যা আপনাকে দ্রুত নিরাময় করতে সাহায্য করবে। আপনি ৪ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যে আপনার বেশিরভাগ দৈনন্দিন কার্যকলাপ করতে পারবেন। কিন্তু ৬ থেকে ৮ সপ্তাহের আগে বাচ্ছা ছাড়া ভাী কিছু তোলা উচিত হবে না।
সিজারের কতদিন পর মিষ্টি খাওয়া যায়?
না, সিজারের পর আপনি মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতে পারবেন না। সি-সেকশনের পরে যে খাবারগুলি আপনার অবশ্যই এড়ানো উচিত তার মধ্যে রয়েছে এমন উপাদান দ্বারা তৈরি খাবার যা প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে এবং শরীরের নিরাময় প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে শর্করাযুক্ত খাবার এবং ভাজা-ভুজি ইত্যাদি। এই দুইটি খাবার খুব খারাপ সদ্য মা হওয়া একজন নারীর জন্য।
সিজারে বাচ্চা হওয়ার কত দিন পর মাসিক হয়?
বেশির ভাগ লোক সি-সেকশনের পর তাদের প্রথম পিরিয়ড হতে ৬-৮ সপ্তাহ লাগে। সি-সেকশন বা ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি থাকলে সি-সেকশনের পরে আপনার পিরিয়ড কত দ্রুত হবে তাকে প্রভাবিত করে না। তবে আপনার মাসিক কতদিন পর হবে তা অনেকটা নির্ভর করে আপনি কি আপনার শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াবেন কিনা তার উপর।
সিজারের পর কি কি খাবার খাওয়া উচিত? | সিজারের পর খাবার তালিকা
১. লো ফ্যাট যুক্ত খাবার:
সিজারের রুগীদের জন্য লো ফ্যাট যুক্ত খাবার সবচেয়ে উপযুক্ত। কম ফ্যাট যুক্ত দুধ ও দই জাতীয় খাবারে রয়েছে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন বি যা রোগীর ফাস্ট রিকোভারীর জন্য প্রয়োজন।
২. ডাল:
প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন ও মিনারেলসে সম্পূর্ণ ডাল একজন সিজারিয়ান রোগীর ডায়েট চার্টো রাখা আবশ্যক।
৩. ভিটামিন সি:
সিজারিয়ান রোগীর জন্য ভিটামিন সি আবশ্যক কারন এটি খা শুকাতে সাহায্য করে।
৪. ডিম:
সিজারিয়ানের ডায়েট চার্টে অবশ্যই ডিম রাখবেন এটি আপনার শরীরে প্রোটিনের জোগান দিবে।
৫. হলুদ:
হুলুদ এ থাকে প্রচুর পরিমান ভিটামিন ও মিনারেলস যা শরীরের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে।
সিজারের কতদিন পর বাচ্চা নেওয়া যায় এই প্রশ্নের উপর পেয়ে গেছেন । আর মনে রাখবেন স্বাস্থ্যহানী করে কখনোই আপনি ২ বছরের আগে বাচ্চা নেওয়ার পরিকল্পনা করবেন না। ধন্যবাদ।
আরো দেখুনঃ
সিজারের কতদিন পর বাচ্চা নেওয়া যায় FAQ
১. সি-সেকশনের কতদিন পরে গর্ভবতী হওয়া যায়?
সিজারের পর পুনরায় গর্ভবতী হওয়ার জন্য আপনার পুরোপুরি সুস্থ হওয়া জরুরি। আর এর জন্য আপনাকে কমপক্ষে ৬ মাস অপেক্ষা করতে হবে তবে আপনার ডাক্তার বা মিডওয়াইফ আপনাকে ১২-১৮ মাস অপেক্ষা করার পরামর্শ দিতে পারেন। সিজারের দাগ পুরোপুরি নিরাময়ের জন্য আপনি যত বেশিদিন অপেক্ষা করবেন তত বেশি সিজারের জায়গা আগের অবস্থায় ফিরে যাবে এবং শক্তিশালী হবে।
২. সি-সেকশনের ২ বছর পর কি স্বাভাবিক প্রসব সম্ভব?
একবার সিজারের পর নরমাল ডেলিভারি বা স্বাভাবিক প্রসব সম্ভব। তবে দুটি সি-সেকশনের পর যারা স্বাভাবিক প্রসবে ইচ্ছুক থাকেন তাদের সাধারণত ডাক্তাররা না করে থাকেন কারণ এতে ঝুঁকি থাকে।
৩. ২টি সি-সেকশনের পরে গর্ভবতী হওয়া কি নিরাপদ?
হ্যাঁ, দুটি সি-সেকশনের পর আপনি গর্ভবতী হতে পারবেন এতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু পরবর্তী গর্ভধারণের জন্য আপনাকে অন্তত চয় সপ্তাহ অপেক্ষা কতে হবে কিন্তু ডাক্তাররা সাধারণত ছয় থেকে ১৮ মাস পর জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবহার করতে উত্সাহিত করেন।
৪. ৩য় সি-সেকশন করা কি নিরাপদ?
একটির পর একটি সি-সেকশন একজন নারীর জন্য জটিল। সাধারণত যেসব মহিলাদের একাধিক বার সিজারিয়ান ডেলিভারি হয় তাদের ঝুঁকি বেড়ে যায় যা প্লাসেন্টার সমস্যার কারণ হয়।
৫. সিজারের পর কি কি খাবার এড়িয়ে চলা উচিত?
সি-সেকশন হওয়ার পরে ডায়েট চার্ট থেকে এমন কিছু বাদ দেওয়া উচিত যা হজম হতে বেশি সময় নেয়। এর মধ্যে রয়েছে: কার্বনেটেড পানীয়, সাইট্রাস জুস, কফি, চা এবং মশলাদার খাবারের মতো আইটেমগুলি এড়িয়ে চলা উচিত কারণ এগুলো পেটে গিয়ে ফুলে যায় এবং গ্যাস সমস্যার সৃষ্টি করে যার ফলে বদহজমের মতো সমস্যা হতে পারে।
৬. একটা সিজার করতে কত সময় লাগে?
সিজারিয়ান বিভাগ হল একটি শিশুর জন্ম দেওয়ার জন্য একটি অপারেশন। সিজারিয়ান সেকশন সার্জারি সাধারণত ৩০-৬০ মিনিট সময় নেয়, যদিও পুরো প্রক্রিয়াটি হতে কয়েক ঘন্টা সময় লাগে।
৭. সি-সেকশন কি একটি বড় সার্জারি?
একটি সিজারিয়ান একটি প্রধান অপারেশন যা অনেক ঝুঁকি রয়েছে, তাই এটি সাধারণত তখনই করা হয় যখন নরমাল ডেলিভারী আপনার এবং আপনার শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়।
৮. সি-সেকশনের অসুবিধা কি?
যত বেশি সি-সেকশন হবে, প্ল্যাসেন্টা প্রিভিয়ার ঝুঁকি তত বেশি হবে এবং ফলাফল হিসেবে প্লাসেন্টা জরায়ুর দেয়ালে যুক্ত হয়ে যায় (প্ল্যাসেন্টা অ্যাক্রেটা)। একটি সি-সেকশন পরবর্তী গর্ভাবস্থায় যোনিপথে প্রসবের চেষ্টাকারী মহিলাদের জন্য জরায়ু ফেটে যাওয়া বা জরায়ু ছিঁড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
৯. সি-সেকশনের কতদিন পর স্বাভাবিক খাবার খেতে পারবেন?
আপনাকে সি-সেকশনের পর ততক্ষণ পর্যন্ত কোন ভারী খাবার খেতে দেওয়া হবে না যতক্ষণ না ডাক্তাররা নিশ্চিত হচ্ছেন যে আপনা অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সম্ভবত, সি-সেকশনের ৪ ঘন্টা পর হালকা খাবার খেতে দেওয়া হয়।