চোখের দৃষ্টি ৬/৬ করার উপায়
চোখের দৃষ্টি ৬/৬ করার উপায় | চোখের সমস্যা বোঝার উপায়
বর্তমান সময়ের মানুষ ইলেকট্রিক গ্যাজেট অতিরিক্ত ব্যবহার করার ফলে নিজের অজান্তেই চোখের দৃষ্টির ক্ষতি করে ফেলছে। তবে এটির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের রোগ ও বদ অভ্যাসের কারণেও চোখের দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি হয়। কিন্তুু বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদের চোখের দৃষ্টি ৬/৬ করার দরকার হয়।
যেমন, বিভিন্ন সরকারি চাকরি নেওয়ার ক্ষেত্রেও অনেক সময় প্রার্থীদের চোখের দৃষ্টি ৬/৬ হতে হয়। কিন্তুু এই ৬/৬ দৃষ্টি বলতে কি বোঝায় এবং আপনার চোখের দৃষ্টি ৬/৬ করার উপায় কি। আজকের আর্টিকেলে আমি আপনাকে সেই বিষয় গুলো জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো।
চোখের দৃষ্টি ৬/৬ বলতে কি বোঝায়?
আজকে আমরা অবশ্যই চোখের দৃষ্টি ৬/৬ করার উপায় গুলো সম্পর্কে জানবো। তবে তার আগে আপনাকে চোখের দৃষ্টি ৬/৬ বলতে কি বোঝায় সে সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। যেন, পরবর্তী আলোচনা গুলো আপনার বুঝতে সুবিধা হয়।
সহজ কথায় বলতে গেলে চোখের দৃষ্টি ৬/৬ বলতে বোঝায়, একজন ব্যক্তি নির্দিষ্ট দুরত্ব থেকে কতটা পরিস্কার দেখতে পাচ্ছে তার একটা পরিমাপ। আর এই চোখের পরিমাপ কে মূলত Visual Acuity= d/D এর মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। যার অর্থ হলো, d= The distance of the subject from the chart এবং D= The distance at which a person with normal vision can just see what the subject sees at 6 meters.
যেমন ধরুন, আপনি যদি আপনার নিজের চোখের দৃষ্টি পরীক্ষা করতে যান। তাহলে প্রথম আপনাকে একটি বড় সাইজ এর আলো যুক্ত থাকা বক্স এর দিকে তাকাতে বলবে।
কেননা, সেই বক্স এর মধ্যে ছোটো. বড় ও মাঝারি সাইজের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন লেখা থাকবে। এবং সেটি একটি স্বচ্ছ আয়নার মধ্যে প্রতিফলন ঘটিয়ে নিদিষ্ট দুরত্ব থেকে আপনাকে পড়তে বলা হবে। আর সেখান থেকে আপনার দুরত্ব হবে মোট ৬ মিটার।
আরো দেখুনঃ-
এখন আপনার চোখের দৃষ্টি যদি ভালো থাকে, তাহলে আপনি সেই দুরুত্ব থেকে সেই অক্ষর গুলো পড়তে পাড়বেন। আর তখন আপনার চোখের দৃষ্টি হবে ৬/৬০. কিন্তুু আপনার দৃষ্টিতে যদি কোনো ধরনের সমস্যা থাকে। তাহলে আপনি সেই দুরত্ব থেকে উক্ত অক্ষর গুলো দেখতে পারবেন না। এবং তারপর আপনার দুরত্ব আরো কমিয়ে আনা হবে।
যেমন, আপনি যদি ০৬ মিটার দুরত্ব থেকে দেখতে না পান। তাহলে আপনার দুরত্ব আরো ০১ মিটার কমিয়ে আনা হবে। কিন্তুু তখন আপনার দৃষ্টি হবে ৫/৬০. এভাবে আপনি যতো কম দুরত্ব থেকে পরীক্ষা করবেন, আপনার চোখের দৃষ্টি ঠিক ততো কম হবে। তো আশা করি, চোখের দৃষ্টি ৬/৬ বলতে কি বোঝায় আপনি সেটি পরিস্কার ভাবে বুঝতে পেরেছেন।
চোখের সমস্যা বোঝার উপায়
বর্তমান সময়ে অনেক মানুষের চোখে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থাকে। তবে আমরা অনেকেই বুঝতে পারিনা যে, আমাদের চোখে আসলে কি কি সমস্যা আছে। তাই এবার আমি আপনাকে বেশ কিছু লক্ষন বলবো। যে লক্ষন গুলো দেখলে আপনাকে বুঝতে হবে যে, আপনার চোখে সমস্যা আছে। আর সেই লক্ষন গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো। যেমন,
- যখন আপনি রাতে গাড়ি চালাবেন,তখন যদি আপনি আপনার চোখ দিয়ে ঝাপসা দেখেন। কিংবা একটু দুরের বস্তুু গুলোকে অষ্পষ্ট দেখেন।
- কিছু সময় পর পর যদি আপনার চোখ লাল অথবা গোলাপী রং ধারন করে। তাহলে বুঝতে হবে যে, আপনার চোখের মধ্যে সমস্যা আছে।
- দিনে অথবা রাতে আপনি যদি ঝাপসা দেখেন। যেমন, টিভি বা অন্য কিছু।
- চোখ যদি কিছু সময় বা কিছুদিন পরপর ব্যাথা করে। মনে রাখবেন, চোখ ব্যাথা করা কখনই ভালো কাজ নয়।
- যদি আপনার খুব ঘন ঘন মাথাব্যাথা হয়। কেননা, অনেক সময় চোখের সমস্যার কারণেও মাথা ব্যাথা অনুভুত হয়।
- যদি হঠাৎ করেই আপনার চোখ ফুলে যায়।
স্বাবাভিক ভাবে আমাদের চোখে যে লক্ষন গুলো দেখলে আপনি বুঝবেন আপনার চোখের সমস্যা। সেই লক্ষন গুলোকে উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে আপনি যদি অন্যান্য কোনো ধরনের সমস্যা দেখেন। তাহলে আপনি অতি দ্রুত অভিজ্ঞ ডক্টরের শরনাপন্ন হবেন।
চোখের দৃষ্টি ৬/৬ করার উপায়
উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, চোখের দৃষ্টি ৬/৬ বলতে কি বোঝায়। তো এবার অনেকের মনে একটি প্রশ্ন জাগবে। সেটি হলো, কিভাবে চোখের দৃষ্টি ৬/৬ করা যায়। তো যেহুতু আপনি চোখের দৃষ্টি পরীক্ষাতে নির্দিষ্ট দুরত্ব থেকে অক্ষর গুলো ষ্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন না। সেহুতু এটা নিশ্চিত থাকবেন যে, আপনার দৃষ্টি শক্তিতে সমস্যা আছে।
আর এই দৃষ্টিশক্তি ভালো করার জন্য অবশ্যই আপনাকে ভালো ও অভিজ্ঞ ডক্টরের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। তবে এবার আমি আপনাকে কিছু চোখের ব্যায়াম এর কথা বলবো। যেগুলো আপনি নিজের ঘরে বসে অনুশীলন করতে পারবেন। আশা করি, এতে আপনার চোখের দৃষ্টির অনেক সুফল হবে। যেমন,
দুর ও কাছে ফোকাস রাখুন-
চোখের দৃষ্টি ভালো করার অন্যতম একটি ব্যায়াম হলো, কাছ ও দুরের বস্তুকে ফোকাস করা। সেজন্য আপনাকে একটি রুমের মধ্যে বসে থাকতে হবে। এবং আপনার দুই হাত সামনের দিকে বাড়িয়ে দিতে হবে। তারপর ফেসবুকের লাইক বাটনের মতো আপনার হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুলটি ধরে থাকতে হবে।
এবার প্রথমে আপনি আপনার রুমের জানালা দিয়ে দুরের কোনো বস্তুর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকুন। এভাবে কয়েক সেকেন্ডে পর্যন্ত তাকিয়ে থাকুন। তারপর পুনরায় আপনি আপনার বৃদ্ধা আঙ্গুলটির দিকে তাকিয়ে থাকুন। মনে রাখবেন, এই ব্যায়ামটি আপনি প্রতিদিন ০৩ থেকে ০৫ মিনিট ধরে করার চেষ্টা করবেন।
হাতের তালু ঘষে তারপর চোখে লাগান-
এই পদ্ধতি তে আপনাকে সবার প্রথমে হাতের তালু শক্ত করে ঘসে দিতে হবে। তারপর যখন আপনার হাতের তালু কিছুটা গরম হবে। তখন আপনাকে সেই হাতের তালু চোখের উপর আলতো করে চাপ দিতে হবে। যেন আপনার হাতের তালুতে থাকা গরমের প্রভাব আপনার চোখের মধ্যে পাওয়া যায়।
কিন্তুু এই কাজটি করার জন্য আপনি কখনই চোখে জোরে জোরে চাপ প্রয়োগ করবেন না। শুধুমাত্র আপনার হাতের তালু ঘসার পর যে তাপ সৃষ্টি হবে। সেটি আপনার চোখের উপর লাগতে দিবেন। এবং আপনাকে শুধুমাত্র ৫ সেকেন্ড সময় নিয়ে এই কাজটি করতে হবে।
চোখের পলক ফেলুন-
যদি আপনি খুব সহজ পদ্ধতি ফলো করে আপনার চোখের দৃষ্টি ভালো করতে চান। তাহলে আপনার জন্য সহজ একটি কাজ হলো নিয়মিত চোখের পলক ফেলতে হবে। কেননা আমরা সকলেই জানি যে যখন আমরা চোখের পলক ফেলি। তখন চোখ তার নিজের সুরক্ষার জন্য পানি উৎপাদন করে।
আর যখন আপনার চোখ এভাবে পানি উৎপাদন করবে। তখন আপনার চোখের শুষ্কতা একবারেই দুর হয়ে যাবে। যার প্রভাবে আপনার চোখের আর্দ্রতা ও কোমলা বিরাজমান থাকবে। যা আপনার চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করতে অনেক গুন সহায়তা করবে।
ভিটামিন এ জাতীয় খাবার গ্রহন করুন-
চোখের দৃষ্টি ভালো করার অন্যতম একটি উপায় হলো, ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহন করা। তাই আপনি নিয়মিত এই ধরনের খাবার গ্রহন করার চেষ্টা করবেন। যেমন, গাজর, মিষ্টি আলু, ডিম, পাট শাক, কুমড়া, পেঁপে, ছোট মাছ ইত্যাদি। এতে করে আপনার চোখের দৃষ্টি আগের তুলনায় অনেক গুন বৃদ্ধি পাবে।
মোবাইল/কম্পিউটার/টিভি থেকে যথাসম্ভব দুরে থাকুন-
আমরা সকলেই জানি যে, মোবাইল, টিভি বা কম্পিউটার এর ডিসপ্লে থেকে ক্ষতিকর রশ্মি বের হয়। তো আপনি যদি আপনার চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে চান। তাহলে অবশ্যই আপনাকে এই ধরনের ডিভাইস ব্যবহারের দিক থেকে সচেতন হতে হবে। এবং চেষ্টা করবেন, এই ধরনের ডিভাইস কম ব্যবহার করার।
অভিজ্ঞ ডক্টরের পরামর্শ নিন-
যদি আপনি আপনার চোখের দৃষ্টিতে সমস্যা খুজে পান। তাহলে অবশ্যই আপনাকে কোনো অভিজ্ঞ ডক্টরের পরামর্শ নিতে হবে। যেন, তাদের মাধ্যমে আপনি আপনার চোখের দৃষ্টি বাড়ানোর জন্য সঠিক চিকিৎসা নিতে পারেন।
কোন ভিটামিনের অভাবে চোখের সমস্যা হয়?
আমরা এতক্ষন থেকে জানতে পারলাম যে, বিভিন্ন কারণে মানুষের চোখের সমস্যা হয়। আর চোখের সমস্যা হওয়ার যে সকল লক্ষন আছে, সেগুলো উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। তো এবার আমাদের জানতে হবে যে, কোন ভিটামিনের অভাবে আমাদের চোখের সমস্যা হয়।
আর আপনি যদি চোখের সমস্যা হওয়ার ভিটামিন সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে আমি আপনাকে মোট ০২ টি ভিটামিন সম্পর্কে বলবো। যেগুলোর কারণে আমাদের চোখের সমস্যা হয়। সেই দুইটি ভিটামিন হলো, ভিটামিন-এ, ভিটামিন বি-১২. যখন আমাদের এই দুটি ভিটামিন এর স্বল্পতা দেখা দেয়। তখন আমাদের চোখে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা শুরু হয়।
চোখের দৃষ্টি বৃদ্ধি করার ঔষধ
আজকের আলোচনায় চোখের দৃষ্টি ৬/৬ করার উপায় গুলো জানার পাশাপাশি। আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই থাকবেন, যারা চোখের দৃষ্টি বৃদ্ধি করার ঔষধ এর নাম জানতে চায়। তো যারা আসলে ঔষধের নাম জানতে চান। তাদের বলে রাখি যে, ঔষধ কখনই ডক্টরের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিত নয়।
কেননা, চোখের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। আর আপনার সেই সমস্যা উপর ভিত্তি করে ঔষধ সেবন করতে হবে। তাই আমি যদি একজন লেখক হয়ে আপনাকে কোনো ঔষধ এর নাম সাজেষ্ট করি। এবং আপনি যদি আমার সাজেষ্ট করা ঔষধ সেবন করেন। তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই চোখের দৃষ্টি বৃদ্ধি করার ঔষধ খেতে হলে অবশ্যই ডক্টরের শরণাপন্ন হতে হবে।
চোখের দৃষ্টি ৬/৬ করার উপায় FAQ
Q: কোন ভিটামিনের অভাবে চোখের সমস্যা হয়?
A: বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় অধিকাংশ মানুষের চোখের সমস্যা হওয়ার পেছনে ভিটামিন এ এর অভাব রয়েছে। তবে ভিটামিন এ ছাড়াও ভিটামিন বি ১২ এর অভাবেও অনেক মানুষের চোখের সমস্যা হয়।
Q: কি খেলে চোখের সমস্যা দুর হয়?
A: এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো নিয়মিত খেলে আপনার চোখের সমস্যা দুর হবে। আর সেজন্য আপনাকে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার গুলো নিয়মিত গ্রহন করতে হবে। যেমন, কচু শাক, কুমড়া, পেঁপে, কাঁঠাল, লাউ শাক, মিষ্টি আলু, ডিম ইত্যাদি।
Q:কোন খাবার খাওয়া চোখের জন্য ক্ষতি কর?
A: আমাদের দৈনন্দিন খাবার তালিকায় এমন কিছু খাদ্য আছে। যেগুলো খেলে আমাদের চোখের দৃষ্টি শক্তি দুর্বল হয়ে যায়। কেননা, একজন মানুষ যদি অতিরিক্ত পরিমানে মিষ্টি জাতীয় খাবার এবং প্রসেসড কার্বোহাইড্রেট খাবার খায়। তাহলে সেই ব্যক্তির চোখের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
Q: চোখের ঝাপসা দুর করার উপায় কি?
A: আপনি খুব সহজেই আপনার চোখের ঝাপসা দুর করতে পারবেন। সেজন্য আপনাকে আপনার ডায়েট লিষ্ট এর মধ্যে সবুজ শাক সবজি রাখার চেষ্টা করবেন। এর পাশাপাশি ডিমের সাদা অংশের মধ্যে প্রচুর পরিমান লিউটিন থাকে। আর আপনি যদি ফ্যাটি এসিড, বিটা ক্যারোটিন ও লিউটিন যুক্ত খাবার গ্রহন করেন। তাহলে আপনার চোখের ঝাপসা দুর হয়ে যাবে।
চোখের দৃষ্টি ৬/৬ করার উপায় নিয়ে কিছুকথা
প্রিয় পাঠক, আপনারা যারা চোখের দৃষ্টি বৃদ্ধি করার উপায় গুলো সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। তাদের জন্য আজকের এই লেখাটি অনেক কাজে আসবে। তো আপনি যদি আজকের দেখানো পদ্ধতি গুলো ফলো করতে পারেন। তাহলে আপনি খুব সহজেই আপনার চোখের দৃষ্টি ৬/৬ করতে পারবেন।
আর আপনি যদি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত আরো কোনো অজানা তথ্য জানতে চান। তাহলে অবশ্যই আপনার বিষয়টি নিচে কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন। ধন্যবাদ, এতক্ষন ধরে আমাদের সাথে থাকার জন্য। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।