রেওয়ামিল কাকে বলে? | রেওয়ামিল করার নিয়ম
রেওয়ামিল কাকে বলে? | রেওয়ামিল এর বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য
রেওয়ামিল! যারা বিজনেস স্ট্যাডিস নিয়ে পড়াশোনা করেন বা করেছেন তাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ সাবজেক্ট হচ্ছে হিসাববিজ্ঞান। আর হিসাববিজ্ঞান এর একটি বিশেষ অধ্যায় হচ্ছে রেওয়ামিল। হিসাববিজ্ঞান এর ব্যাসিক যে অংশ গুলো বুজতে হয় তার মধ্যে রেওয়ামিল অন্যতম। কারণ গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করার ক্ষেত্রে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
আর তাই আজকের এই আর্টিকেল এর বিষয়বস্তু হচ্ছে রেওয়ামিল কাকে বলে। রেওয়ামিল কাকে বলে এর মাধ্যমেই জানা যাবে এর খুঁটিনাটি বিষয়বস্তু। চলুন তাহলে আলোচনা করা যাক রেওয়ামিল কাকে বলে।
রেওয়ামিল কি?
“Trial Balance” যার বাংলা অর্থ হচ্ছে রেওয়ামিল। রেওয়ামিল মূলত করা হয় নির্ভুল ভাবে খতিয়ান করার জন্য। এছাড়া গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করা তো আছেই। বলা হয়ে থাকে, গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করা ছাড়াও রেওয়ামিলের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এবার জেনে নেই, রেওয়ামিল কাকে বলে এই প্রসঙ্গে।
রেওয়ামিল কাকে বলে?
একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যাবতীয় আয়, ব্যয়, দায় এবং সম্পদ জাতীয় হিসেব গুলো জের টানার মাধ্যমে ডেবিট এবং ক্রেডিট অনুযায়ী সাজিয়ে হিসাবের শুদ্ধতা যাচাই করাকে রেওয়ামিল বলা হয়। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে জাবেদা এবং খতিয়ানের লেনদেন গুলো সঠিক ভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে কিনা তা জানার একমাত্র সেতু হচ্ছে রেওয়ামিল।
আরো দেখুনঃ
রেওয়ামিলের ছক তৈরির নিয়ম
এটু্জেড কোম্পানি এর
রেওয়ামিল
৩১ ডিসেম্বর, ২০২২
ক্রমিক নং | হিসাবের নাম/বিবরণ | খ.পৃ. | ডেবিট (টাকা) | ক্রেডিট (টাকা) |
১. | হাতে নগদ | ১২,০০০ | ||
২. | মূলধন হিসাব | ১০,০০০ | ||
৩. | বিক্রয় হিসাব | ৬,০০০ | ||
৪. | ক্রয় হিসাব | ৪,০০০ | ||
১৬,০০০ | ১৬,০০০ |
রেওয়ামিল করার নিয়ম
হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই ও আর্থিক সহজভাবে প্রস্তুত করার জন্য কোন নির্দিষ্ট তারিখে খতিয়ানের জের সমূহকে ডেবিট ও ক্রেডিট এই দুই ভাগে ভাগ করে যে তালিকা প্রস্তুত করা হয় তাকেই রেওয়ামিল বলে।
রেওয়ামিলের নিয়মের দুইটি দিক রয়েছে:
যে হিসাবগুলি রেওয়ামিলের ডেবিট দিকে বসবে:
- যাবতীয় সম্পদের হিসাব ডেবিট দিকে বসবে। যেমন: প্রাপ্য বিল, নগদ তহবিল, আসবাবপত্র ইত্যাদি।
- সকল প্রকার খরচ ও ক্ষতি রেওয়ামিলের ডেবিট দিকে বসবে। যেমন: মজুরি, বিবিধ ক্ষতি, বেতন ইত্যাদি।
- সকল প্রকার অগ্রিম খরচ রেওয়ামিলের ডেবিট দিকে বসবে। যেমন: অগ্রিম মজুরি, অগ্রিম বেতন, অগ্রিম ভাড়া ইত্যাদি।
রেওয়ামিলের যে সকল হিসাব ক্রেডিট দিকে বসবে:
- সকল প্রকার দায় রেওয়ামিলের ক্রেডিট দিকে বসবে। যেমন: ব্যাংক জমাতিরিক্ত, বিবিধ পাওনাদার, ঋণ ইত্যাদি।
- সকল প্রকার মূলধন রেওয়ামিলের ক্রেডিট দিকে বসবে। যেমন: ব্যবসার জন্য টাকা।
- যাবতীয় অগ্রিম দায়, রেওয়ামিলের ক্রেডিট দিকে বসবে। যেমন: অগ্রিম সেবা আয়, অগ্রিম ভাড়া প্রাপ্তি, অগ্রিম পরামর্শ ফি ইত্যাদি।
রেওয়ামিলের ব্যতিক্রম তথ্যসমূহ:
- খরচ বকেয়া = দায় ক্রেডিট (যেমন: বকেয়া মনিহারি খরচ)
- খরচ অগ্রিম = সম্পদ = ডেবিট (যেমন: অগ্রিম বীমা খরচ)
- আয় বকেয়া = সম্পদ = ডেবিট যেমন: বাকিতে পণ্য বিক্রয়
- আয় অগ্রিম = দায় = ক্রেডিট যেমন: ভবিষ্যতে সেবা প্রদানের জন্য অগ্রিম টাকা গ্রহণ
- সকল প্রকার সঞ্চিতি ক্রেডিট দিকে বসবে। শুধু পাওনাদারের বাট্টা সঞ্চিতি ডেবিট দিকে বসবে।
- সকল প্রকার তহবিল ক্রেডিট দিকে বসবে। শুধু নগদ তহবিল ও ব্যাংক তহবিল ডেবিট দিকে বসবে।
- যে কোন উত্তোলন লিখা থাকলেই ডেবিট দিকে বসবে।
যে হিসাবগুলো রেওয়ামিলের অন্তর্ভূক্ত হবে না:
- প্রারম্ভিক নগদ
- প্রারম্ভিক ব্যাংক জমা
- সমাপনী মজুদ পণ্য
- সমাপনী মনিহারি
- সম্ভাব্য দায় ও সম্ভাব্য সম্পদ
বি:দ্র: ক্রয় এর বদলে সম্বন্বিত ক্রয় থাকলে তখন প্রারম্ভিক মজুদ না এসে রেওয়ামিলে সমাপনী মজুদ অন্তর্ভূক্ত হয়।
মনিহারির ব্যবহৃত অংশ বা সম্বন্বিত মনিহারিরে উল্লেখ থাকলে প্রারম্ভিক মনিহারি না এসে রেওয়ামিলে সমাপনী মনিহারি অন্তর্ভূক্ত হয়।
সম্বন্বিত ক্রয় ও মনিহারির ব্যবহৃত অংশ বা সম্বন্বিত মনিহারি রেওয়ামিলের ডেবিট দিকে বসবে।
অনিশ্চিত হিসাব:
- যদি রেওয়মিল না মিলে এবং না মিলার কারণও যদি তাৎক্ষণিকভাবে বের করা না যায় তখন যে হিসাব খুলে রেওয়ামিল মিলানো হয় তাকে অনিশ্চিত হিসাব বলে।
- মূলত: রেওয়ামিল মিলানোর জন্যই অনিশ্চিত হিসাব খোলা হয়।
- অনিশ্চিত হিসাবে রেওয়ামিলের পার্থক্যের পরিমাণ বসিয়ে রেওয়ালিকে সাময়িকভাবে মিলানো হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ভুল নির্ণয় করে যখন সংশোধন করা হয় তখন আর অনিশ্চিত হিসাবের ব্যালেন্স থাকে না।
রেওয়ামিলের সীমাবদ্ধতা
হিসাবরক্ষণ ক্রিয়ায় মাঝে মাঝে এমন কিছু ভুল হয় যা রেওয়ামিলের মাধ্যমে ধরা পরে না, সেগুলো ২ প্রকার:
- নীতিগত ভুল।
- করণিক ভুল।
নীতিগত ভুল-
হিসাবরক্ষণের নীতিমালা না মেনে লেনদেন লিপিবদ্ধ করা হলে তাকে নীতিগত ভুল বলে। যেমন: অগ্রিম বীমাকে সম্পত্তি হিসাবে না দেখিয়ে ব্যয় হিসাবে দেখালে তা হবে নীতিগত ভুল।
করণিক ভুল আবার ৪ প্রকার:
ক) বাদ পড়ার ভুল: কোন লেনদেন লিপিবদ্ধকরণের সময় সম্পূর্ণরূপে বাদ পড়লে তাকে বাদ পড়ার ভুল বলে। যেমন: ৫,০০০ টাকা ধারে পণ্য লিপিবদ্ধ করা হলো না।
খ) লেখার ভুল: লেনদেন লিপিবদ্ধকরণের সময় টাকার অংকে ভুল হলে তাকে লেখার ভুল বলে। যেমন: ৫০০০ টাকার ক্রয়কে ৫০ টাকায় লিপিবদ্ধ করা হলো। এখানে উভয় দিকে ডেবিট ও ক্রেডিট দিকে ৪৫০ টাকা কম দেখানো হচ্ছে।
গ) পরিপূরক ভুল: লেনদেন লিপিবদ্ধ করার সময় একাধিক ভুল হলে এবং তাদের একটি ভুল দআবরা অপরটি সংশোধন হয়ে গেলে তাকে পরিপূরক ভুল বলে।
যেমন: ১০,০০০ টাকার একটি ক্রয়কে ৫,০০০ টাকায় চার্জ করা হয়েছে। অন্যদিকে বেতন ৫,০০০ টাকার বদলে ১০,০০০ টাকায় চার্জ করা হয়েছে। এখানে প্রথম লেনদেনে ৫,০০০ টাকা ডেবিট দিকে কম দেখানো হয়েছে এবং দ্বিতীয় দিকে ৫,০০০ টাকা ডেবিট দিকে বেশি দেখানো হয়েছে।
ঘ) বে-দাখিলার ভুল: লেনদেন লিপিবদ্ধকরণের সময় কোন নির্দিষ্ট হিসাবেকে ডেবিট বা ক্রেডিট করার বদলে সমজাতীয় অন্য হিসাবকে ডেবিট বা ক্রেডিট করলে তাকে বে-দাখিলার ভুল বলে। যেমন: 6,000 টাকার ভাড়াকে 6,000 টাকার বেতন হিসাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
রেওয়ামিল এর বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য
শুধুমাত্র রেওয়ামিল কাকে বলে তা জানলেই হবে না বরং জানতে হবে এর বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে। যেমনঃ
- গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই।
- ভুল সংশোধন করা।
- লেনদেনের সঠিক লিপিবদ্ধকরণ।
- ভুলত্রুটি উদঘাটন করা।
- সময়ের অপচয় রোধ করা।
- দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতির ব্যবহার।
- নিয়ন্ত্রণ।
- তূলনামূলক বিশ্লেষণ এবং
- তথ্য প্রদান।
এগুলো রেওয়ামিলের বৈশিষ্ট্য কিংবা উদ্দেশ্যের মধ্যে পরে। যদিও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রেওয়ামিল করা জরুরী কিংবা বাধ্যতামূলক নয়।
রেওয়ামিল মূলত কেনো তৈরি করা হয়?
সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠানে একটা নির্দিষ্ট সময় পর আয়, ব্যয়, দায় এবং সম্পদের হিসাবের একটা যাচাই পর্ব করতে হয় বা করা হয়। এখানে মূলত খতিয়ানের জের দিয়ে রেওয়ামিল প্রস্তুত করা হয় এবং গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করা হয়। মূলত গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাইয়ের জন্য রেওয়ামিল তৈরি করা হয়।
আরো দেখুনঃ
রেওয়ামিল কাকে বলে? FAQ
১. অনাদায়ী পাওনা রেওয়ামিলের কোথায় বসবে?
রেওয়ামিলে অনাদায়ী পাওনা নেই কিন্তু যদি সমন্বয়ে অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি ধরা হয় তাহলে সেই অনাদায়ী পাওনার সাথে সমন্বয়ের অনাদায়ী পাওনা ও অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি যোগ করে যোগফল থেকে রেওয়ামিলের অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি বাদ দিলে সেই ফলাফলকে পরিচালন ব্যায়ের অধীনে দেখাতে হয়।
২. সমন্বিত ক্রয় কি?
সমন্বিত ক্রয় হলো ক্রয়ের সমন্বয় করে প্রকৃত ক্রয়ের পরিমাণ বের করা। সমন্বিত ক্রয়ের সূত্র হলো: সমন্বিত ক্রয় = প্রারম্ভিক মজুদ + ক্রয় – সমাপনী মজুদ। সকল প্রকার ক্রয় যোগ করার পর সমাপনী মজুদ বাদ দিলেই সমন্বিত ক্রয় বের করা যাবে।
৩. রেওয়ামিলের ডেবিট পাশে কি কি বসে?
রেওয়ামিলের ডেবিট পাশে মূলধনের সুদ বসে।
সবশেষে বলা যায়, প্রায় অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে যারা তাদের সকল আয়, ব্যয় কিংবা দায় সম্পদের সঠিকতা যাচাই করতে চায় কিংবা হিসাব শেষে শুদ্ধতা যাচাই করতে চায়। তারাই মূলত একটি নির্দিষ্ট সময় শেষে রেওয়ামিল তৈরি করে থাকে। তবে হ্যাঁ, রেওয়ামিল তৈরি করার ক্ষেত্রে অবশ্যই রেওয়ামিল কাকে বলে এর পাশাপাশি এর ব্যাসিক ব্যাপার গুলোও জানতে হবে।