শব্দ কাকে বলে?
শব্দ কাকে বলে? | শব্দ কত প্রকার ও কি কি?
আমরা শব্দ কেনো ব্যবহার করি? আমরা প্রত্যেকে যখন একে অপরের সাথে আমাদের মনের ভাব প্রকাশ করতে যাই তখন এই শব্দের সাহায্যে তৈরি করি বাক্য। আর এই বাক্যের ছলেই প্রকাশ করি মনের ভাব। এখানে শব্দ তৈরিতে যেমন এক বা একাধিক বর্ণের প্রয়োজন হয় তেমনি একটি বাক্য তৈরি করতেও শব্দ এর প্রয়োজন হয়। শব্দ ছাড়া আমরা কেউ কারো মনের ভাব প্রকাশ করতে পারবো না কিংবা একটি অর্থবহ বাক্যও তৈরি করতে পারবো না। এখন দেখবো শব্দ কাকে বলে.
শব্দ কাকে বলে?
“শব্দ” হচ্ছে বাক্য কিংবা ভাষার মূল উপাদান। আমরা আমাদের মনের ভাব অন্যের কাছে প্রকাশ করার জন্য শব্দ ব্যবহার করি। এখানে এক বা একাধিক বর্ণের মিলনে তৈরি হয় শব্দ। শব্দ হচ্ছে অর্থবোধক ধ্বনিসমষ্টি যা বাক্য গঠণে সহায়তা করে।
এক কথায় যদি বলি, বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত ধ্বনিসমষ্টি কে বলা হয় শব্দ। সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে, একটি পূর্ণ অর্থবহ বাক্য প্রকাশ করার ক্ষেত্রে শব্দ বা শব্দসমষ্টি কতটা প্রয়োজন।
শব্দ কত প্রকার ও কি কি?
শব্দ কে অনেক সময় বলা হয় শব্দ সম্পদ। কারণ শব্দ ছাড়া তো আর অর্থবহ বাক্য গঠণ করা যায় না। উপরের আলোচনায় জেনেছি বা জানার চেষ্টা করেছি, শব্দ কাকে বলে। এখন আসি জেনে নেই, শব্দ কত প্রকার ও কি কি তার বিস্তারিত।
উৎপত্তিগত দিক থেকে শব্দ ৫ প্রকার।
যেমনঃ তৎসম শব্দ, তদ্ভব শব্দ, অর্ধতৎসম শব্দ, দেশি শব্দ এবং বিদেশি শব্দ। আসুন একটু বিস্তারিত জেনে নেই।
তৎসম শব্দঃ সংস্কৃত ভাষা থেকে যেসকল শব্দের উৎপত্তি এবং অপরিবর্তিত তাকে বলা হয় তৎসম শব্দ। যেমনঃ নক্ষত্র, আকাশ ইত্যাদি।
তদ্ভব শব্দঃ তদ্ভব শব্দকে বলা হয় পারিভাষিক শব্দ। কারণ তদ অর্থ সংস্কৃত আর ভব অর্থ জাত বুঝায়। যার পুরো অর্থ দাঁড়ায় সংস্কৃত থেকে জাত। আরো সহজ করে যদি বলি, যেসব সংস্কৃত শব্দ প্রকৃত ভাষার মধ্য দিয়ে পরিবর্তিত হয়ে বাংলাভাষায় যুক্ত হয়েছে তাকে তদ্ভব শব্দ বলা হয়। যেমনঃ হাত, গাত্র ইত্যাদি।
অর্ধতৎসম শব্দঃ অর্ধ মানে হচ্ছে আধা বা অর্ধেক। আর তৎসম দিয়ে সংস্কৃত বুঝায়। অর্থাৎ, যেসব তৎসম শব্দ অর্ধ কিংবা কিঞ্চিত পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় ব্যবহার করা হয় তাকে অর্ধতৎসম শব্দ বলে। যেমনঃ গিন্নি, কিচ্ছু ইত্যাদি।
দেশি শব্দঃ আমাদের দেশের আদি অধিবাসীরা আদিকাল থেকে যেসব ভাষা ব্যবহার করে আসছে এবং যে ভাষা গুলো বাংলা ভাষায় স্থান করে নিয়েছে সেগুলো কে দেশি ভাষা বলা হয়। যেমনঃ চাল, কুলা ইত্যাদি।
বিদেশি ভাষাঃ বিভিন্ন কারণে, বিভিন্ন অবস্থায় কিছু কিছু বিদেশি ভাষা বাংলা ভাষায় অবস্থান করে নিয়েছে। আর সেসব ভাষাকেই বিদেশি ভাষা বলা হয়। যেমনঃ চিনি, পাউরুটি ইত্যাদি।
এতক্ষণ আমরা জানলাম উৎপত্তি দিক থেকে শব্দের শ্রেণিবিভাগ। এখন আসুন জেনে নেই গঠনগত দিক থেকে শব্দের প্রকারভেদ।
গঠণগত দিক থেকে শব্দ ২ প্রকার।
যথাঃ মৌলিক শব্দ এবং সাধিত শব্দ। চলুন বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
মৌলিক শব্দঃ যে সকল শব্দ কে ভেঙ্গে কিংবা বিশ্লেষণ করে আলাদা করা যায় না তাকে মৌলিক শব্দ বলে। যেমনঃ ফল, নাক ইত্যাদি।
সাধিত শব্দঃ যে সকল শব্দ কে ভেঙ্গে কিংবা বিশ্লেষণ করে আলাদা বা ভাগ করা যায় তাকে সাধিত শব্দ বলে। যেমনঃ চাঁদ+মুখ= চাঁদমুখ, ডুব+উরি= ডুবুরি ইত্যাদি।
এবার আসি অর্থগত দিক থেকে শব্দের শ্রেণিবিভাগে। বিস্তারিত নিচে আলোচনা করা যাক।
অর্থগত দিক থেকে শব্দ ৩ প্রকার।
যথাঃ যৌগিক শব্দ, রূঢ় শব্দ এবং যোগরূঢ় শব্দ। চলুন বিস্তারিত জেনে নেই।
যৌগিক শব্দঃ যে সকল শব্দের ব্যুৎপত্তি অথবা ব্যবহারিক অর্থ একই রকম সে সকল শব্দ গুলো কে যৌগিক শব্দ বলে। যেমনঃ রাখ+আল= রাখাল, ঢাকা+আই= ঢাকাই ইত্যাদি।
রূঢ় শব্দঃ যে সকল শব্দ উপসর্গ ও প্রত্যয় দিয়ে গঠিত এবং এদের ব্যুৎপত্তি অথবা ব্যবহারিক অর্থ একদম আলাদা তাদেরকে রূঢ় শব্দ বলে। যেমনঃ হাত+ই= হাতি ইত্যাদি।
যোগরূঢ় শব্দঃ সমাস দিয়ে গঠিত যে সকল শব্দের ব্যুৎপত্তি অথবা ব্যবহারিক অর্থ একদম ভিন্ন তাদের কে যোগরূঢ় শব্দ বলে। যেমনঃ জলদ, পঙ্কজ ইত্যাদি।
আরো দেখুনঃ
Q: শব্দ ভাণ্ডার কাকে বলে?
A: আমরা সবাই বাংলা ভাষার অভিধান এর নাম শুনে থাকব। তো এই বাংলা ভাষার অভিধান এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে শব্দ গচ্ছিত রয়েছে। আর গচ্ছিত থাকা এই সকল শব্দকে একত্রে বলা হয়ে থাকে, শব্দ,ভাণ্ডার।
Q: অর্থ অনুসারে শব্দ কত প্রকার?
A: শব্দ কাকে বলে সে সম্পর্কে আপনি উপরের আলোচনায় জানতে পেরেছেন। তবে অর্থ অনুসারে শব্দ কত প্রকার সেই সম্পর্কে আপনার পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। মূলত অর্থ অনুসারে শব্দকে তিন (৩) প্রকারে ভাগ করা হয়ে থাকে।
Q: কয়েক টি খাঁটি বাংলার শব্দ লিখুন?
A: বিভিন্ন সময় আমাদের খাঁটি বাংলা শব্দের প্রয়োজন হয়ে থাকে। তো এবার আমি আপনাকে বেশ কিছু খাঁটি বাংলা শব্দের সাথে পরিচয় করিয়ে দিব। যে গুলো হল, বাখারি, ঝাল, কলা, ঝোঁপ, ডাব, ডিম, কামড়, টোপর, কুলা, খোঁপা, ঢোল, ঢেঁকি ইত্যাদি।
Q: সাধিত শব্দের অপর নাম কি?
A: সাধিত শব্দের অপর নাম হল, অপরিবর্তিত সাধিত শব্দ বা যৌগিক শব্দ।
Q: সাধিত শব্দ বলতে কি বুঝায়?
A: আপনি বিভিন্ন প্রকারের শব্দ দেখতে পারবেন। তবে যে সকল শব্দ গুলো কে যখন বিশ্লেষণ করা হয়। তখন সেই শব্দ গুলোর আলাদা আলাদা অর্থ বোধক শব্দ পাওয়া যায়। তাকে বলা হয়ে থাকে, সাধিত শব্দ। যেমন, জমিদার, ফুলেল, দয়ালু ইত্যাদি। এ গুলো হলো সাধিত শব্দের উদাহরণ।
উপসংহারঃ শব্দ একটি পূর্ণ অর্থবহ বাক্য গঠণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর প্রকার ভেদের উপর নির্ভর করে বাংলায় যুক্ত হয়েছে নানান রকম শব্দ। আর এই শব্দের মাধ্যমেই আমরা প্রতিনিয়ত কিছু অর্থবহ বাক্য দিয়ে নিজের ভাব অন্যের কাছে প্রকাশ করি। যা আমাদের জীবনে খুব তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলে।