তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি? | তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কাকে বলে?
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি? | ICT Full Meaning
বর্তমান যুগই হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগ। আমরা খুবই সৌভাগ্যবান কারণ বর্তমান সময়টাতে সারা পৃথিবীতে তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একটা অসাধারণ বিপ্লব ঘটতে যাচ্ছে। প্রযুক্তির উন্নতির ফলে শিক্ষা, ব্যবসা,চিকিৎসা, অর্থনীতি, সমাজ প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যপক পরিবর্তন ঘটছে। এ প্রযুক্তি দিয়ে আমরা কেবল তথ্যের আদান-প্রদান করিনা, আমরা তথ্য গুলো বিশ্লেষণ ও প্রক্রিয়া করি। ইন্টারনেট সেবাকে কাজে লাগিয়ে কম্পিউটার ও মোবাইল দিয়ে এ প্রযুক্তির বেশিরভাগ কাজ সম্পন্ন হয়।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি এ বিষয়টি বর্তমানের ব্যাপক আলোচনার বিষয়বস্তু। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটি। শিক্ষার্থীরা যাতে ছোট থেকেই এ বিষয়টির ব্যাপারে পর্যাপ্ত জ্ঞান লাভ করতে পারে সেজন্য আমাদের শিক্ষা কারিকুলামে আলাদা নতুন বিষয় হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি। কিন্তু যারা আগেই পড়াশুনা শেষ করে ফেলেছেন বা যারা এ বিষয়টির ব্যাপারে এখনও তেমন জানেনা তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেল। আজকের আর্টিকেলে জানব তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি? এটা কাকে বলে? এর ইংরেজি কি?আইসিটি এর পূর্ণরূপ কি?
আরো দেখুনঃ ন্যানো টেকনোলজি কি?
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি?
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি? ক্লড এলউড শ্যানন নামে একজন মার্কিন গণিতবিদ ও বিজ্ঞানী ১৯৩৬ খ্রীস্টাব্দে ম্যাসাচুসেট্স ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিতে গ্রাজুয়েট করার সময় তিনি ভ্যানেভার বুশ এর ডিফারেন্সিয়াল এ্যানালাইজার (যা এক প্রকারের এনালগ কম্পিউটার) এর উপর কাজ করেন। এই গবেষণা করার সময় শ্যানন বুঝতে পারেন যে, বূলের তত্ত্ব কম্পিউটার বিজ্ঞানের জন্য খুব কার্যকর। A Symbolic Analysis of Relay and Switching Circuits নামক তার একটি গবেষণাপত্র ১৯৩৮ খ্রীস্টাব্দে ট্রান্সাকশন্স অফ আমেরিকান ইন্সটিটিউট অফ ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারস নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়। এই পত্রটির এবং এ বিষয়ক গবেষণার জন্য শ্যাননকে তথ্য প্রযুক্তির জনক বলা হয়।
যোগাযোগ প্রযুক্তিঃ আর যোগাযোগ প্রযুক্তি হলো কম্পিউটার,মোবাইল বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে ডেটা বা তথ্য আদান প্রদান সম্পর্কিত প্রযুক্তি।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিঃ তথ্য,যোগাযোগ ও প্রযুক্তির মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক থাকায় বর্তমানে এদেরকে একত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বলা হয়।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইংরেজি কি?
তথ্য শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ Information শব্দটি ল্যাটিন শব্দ Informatio থেকে এসেছে। কোন কিছু সম্পর্কে জানতে বা জ্ঞান অর্জন করতে হলে সেটা সম্পর্কে যে উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়, সে উপাত্তগুলোকে তথ্য বলে।
প্রযুক্তি শব্দটির ইংরেজি হল Technology যা গ্রিক শব্দ Techne এবং Logia থেকে এসেছে। যার মানে হলো কৌশল, দক্ষতা, পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ার সমষ্টি যা পণ্য ও সেবা উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
তথ্য প্রযুক্তিকে আলাদাভাবে বলা হয় Information Technology।আর যোগাযোগ প্রযুক্তিকে বলা হয় Communication Technology।পুরো কথাটি মিলে আমরা বলি Information and Communication Technology বা (ICT).
আইসিটি এর পূর্ণরূপ কি? | ICT Full Meaning
আইসিটি শব্দটি গত এক দশকের সবচেয়ে আলোড়িত বিষয়।এই ICT এর পূর্ণরূপ হল
- I=Information
- C=Communication
- T=Technology
যার পূর্ণ ভাবার্থ হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। আইসিটি শব্দটির ব্যবহার ১৯৮০ সালের দিকে শুরু হলেও শব্দটি জনপ্রিয়তা লাভ করে ১৯৯৭ সাল থেকে। স্টিভেনসন প্রথম ১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্য সরকারকে এক প্রতিবেদন পেশ করেন যেখানে এই শব্দটি উল্লেখ করেন, যা পরবর্তীতে ২০০০ সালে যুক্তরাজ্যের নতুন জাতীয় পাঠ্যপুস্তকে সংযোজিত হয়।
আরো দেখুনঃ কম্পিউটারের গতি বৃদ্ধি করার উপায়.
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কাকে বলে?
প্রযুক্তিবিদ্যার যে শাখা দ্বারা বৈদ্যুতিক উপায়ে তথ্য সংযোগ, সংগ্রহ, তৈরি,প্রচার, বিতরণ ও বদলানো যায় তাকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বলে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি হলো এক ধরনের একীভূত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং টেলিযোগাযোগ, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও এ সম্পর্কিত সফটওয়্যার,তথ্য সংরক্ষণ, অডিও-ভিডিও সিস্টেম ইত্যাদির সমন্বয়ে গঠিত এমন এক ধরনের ব্যবস্থা যার মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারী খুব সহজে তথ্য গ্রহণ করতে পারবে এবং সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ করতে পারেন।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুবিধা
- তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে ডেটা পরিবর্তন,পরিবর্ধনের গতি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- কম সময়ে বেশি তথ্য গ্রহন ও পাঠানো সম্ভব হচ্ছে ফলে খরচ কমে যাচ্ছে।
- এ ফলে সময়ের সাশ্রয় হচ্ছে ও কাজের গতিও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- শিক্ষার্থী ঘরে বসে অনলাইনে ক্লাসে ও পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে পারছে। যা তাদেরকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে না যেতে পারলেও পড়াশুনার সাথে সম্পৃক্ত রাখছে।
- বাজার বা শপিং মলে কেনাকাটা করার ঝামেলা দূর করে অনলাইনে কেনাকাটার সুবিধা দিচ্ছে।
- ব্যবসা বানিজ্যে ব্যাপক লাভের সুযোগ হচ্ছে।
- কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- তাৎক্ষণিক যোগাযোগ, তথ্য সংগ্রহ ও বিতরণ ইত্যাদি করতে পারছে। দূরে বসবাসকারী বা প্রবাসীর সাথে সহজে ভিডিও কলে দেখা হচ্ছে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অসুবিধা
প্রতিটি জিনিসের সুবিধা ও অসুবিধা আছে। তেমনি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিরও বেশ কিছু অসুবিধা আছে।
১.তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির একটি বড় অসুবিধা হল গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার অভাব। মানুষ সবসময় চিন্তিত থাকে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়া নিয়ে।এজন্য এ সেক্টরের কর্মীদের কাজগুলি সুরক্ষিত করার জন্য আইটি আপ টু ডেট ও নিরাপত্তা নিয়ে কঠোর নীতিমালা থাকা উচিত।
২.তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ফলে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হলেও বেকারত্বও বাড়ছে। মানে আইসিটি খাতে কাজ করতে যে দক্ষতা দরকার সে দক্ষতা না থাকায় বেকারত্ব বাড়ছে।
৩.তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে বাচ্চারা,অল্প বয়সী ছেলেমেয়েরা,বড়রা দিনের অধিকাংশ সময় গেম খেলে সময় কাটায়। এতে করে তাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যে ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে। এজন্য তারা বাইরের প্রাকৃতিক জগত ও খেলাধুলোর প্রতি মনোযোগ হারিয়ে ফেলছে। ফলে অসুস্থ জাতি গড়ে উঠছে।
আরো দেখুনঃ আধুনিক কম্পিউটারের জনক কে?
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন 1: আইটি কি?
উত্তর: আইটি (তথা Information Technology) হলো তথ্য এবং ডেটা সংগ্রহণ, সংক্রান্তভাবে তাদের প্রয়োগ এবং সরঞ্জামের মাধ্যমে তথ্য প্রক্রিয়া করার একটি ব্রড ডোমেন। আইটি প্রয়োজনে কম্পিউটার, সার্ভার, নেটওয়ার্ক, সফ্টওয়্যার, ডাটাবেস, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, সাইবার নিরাপত্তা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সাধনাগুলি ব্যবহার করে তথ্য প্রক্রিয়া করে।
প্রশ্ন 2: কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি?
উত্তর: কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হলো একটি সংযোগিত সেট যেখানে বিভিন্ন কম্পিউটার ডিভাইস ফাইল, তথ্য, সংক্ষিপ্ত বাণী, মাল্টিমিডিয়া ইত্যাদি আদান-প্রদান করতে পারে। এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ব্যক্তিরা তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে, কম্পিউটার সম্প্রদায় ব্যবহার করতে পারে এবং সাথে কাজ করতে পারে।
প্রশ্ন 3: সাইবার নিরাপত্তা কি?
উত্তর: সাইবার নিরাপত্তা হলো কম্পিউটার সিস্টেম, নেটওয়ার্ক, ডেটা এবং তথ্য বাচাও এবং তাদের তথ্যসমূহ অপরাধীদের হাতে পরতে বাধ্য করার জন্য বিভিন্ন সুরক্ষা মাধ্যমগুলির প্রয়োগ। সাইবার নিরাপত্তা অন্তর্ভুক্ত করে ক্যাপ্টারিং ডাটা, নেটওয়ার্ক সেকিউরিটি, ক্রিপ্টোগ্রাফি, ব্যবহারকারী আপনের তৈরি পাসওয়ার্ড এবং অন্যান্য মাধ্যম যাদের মাধ্যমে অপরাধী থাকা প্রয়োজন তাদের প্রবেশ বাধা দেওয়া হয়।
প্রশ্ন 4: ডাটাবেস কি?
উত্তর: ডাটাবেস হলো একটি বিশেষ ধরণের স্ট্রাকচার যেখানে ডেটা সংরক্ষিত এবং প্রবেশ করানো হয়। ডাটাবেস সাধারণভাবে ডেটা সংরক্ষণ এবং প্রবেশ করানোর জন্য সবচেয়ে সাধারণ প্রযুক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ডাটাবেস ব্যবহার করে তথ্য এবং ডেটা সাজানো এবং প্রবেশ করানো সহজ হয়, যাতে তথ্য সঠিক এবং প্রাসঙ্গিক ভাবে ব্যবহৃত হতে পারে।
প্রশ্ন 5: প্রোগ্রামিং ভাষা কি?
উত্তর: প্রোগ্রামিং ভাষা হলো মানুষ এবং কম্পিউটার মধ্যে যে সংলগ্ন বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরণের স্টেটমেন্ট এবং কমান্ড লিখার একটি সংজ্ঞা। প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করে কম্পিউটারে নির্দিষ্ট কাজ করানো যায়, যেমন একটি সফ্টওয়্যার তৈরি করা, ডেটা প্রসেসিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি তা আজকের আর্টিকেল টি পড়ে অনেকটা বুঝা গেছে। তাই আমরা এর সুফল পাওয়ার জন্য এর ব্যাপারে জানব ও জানাব। কারন এর উদ্দেশ্য হচ্ছে আগামী বিশ্বকে একটি বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্বে পরিণত করা যার ভিত্তি হবে অগাধ তথ্যের অবাধ প্রবাহ।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়টি কিন্ত যেকোন বয়সেই রপ্ত করতে পারেন। এটা শেখার দরজার সবার জন্য উন্মুক্ত। তাই আমরা এই প্রযুক্তি শিক্ষা নিবো, তাহলে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে পারব এবং দেশকে সম্পদশালী করে গড়ে তুলতে পারব।